Header Ads Widget


নিরানব্বইয়ের বাধা - এম এস হাবিবুর রহমান

জীবন এক বিচিত্র যাত্রা, যেখানে আমরা প্রতিনিয়ত নতুন লক্ষ্য স্থির করি আর তা অর্জনের জন্য ছুটে চলি। কখনো কখনো সেই লক্ষ্য প্রায় হাতের মুঠোয় চলে এলেও, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে বা অপ্রত্যাশিত কোনো বাধার কারণে তা অধরা থেকে যায়। এই যে সাফল্যের একেবারে দোরগোড়ায় এসেও থমকে যাওয়া, একেই আমরা বলি "নিরানব্বইয়ের ধাক্কা"। এই ধাক্কা শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, বরং মানসিক আঘাত হয়ে আমাদের ভেতরটা নাড়িয়ে দেয়।

তবে, গল্পের মোড় তখন ঘুরে যায় যখন এই ধাক্কা পেরিয়ে আমরা নিজেদের ভেতরের এক নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হই। সেই চ্যালেঞ্জ হলো "নিরানব্বইয়ের বাধা"। জীবনে কিছু স্বপ্ন থাকে, যা আমাদের অস্তিত্বের গভীরে মিশে যায়। সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য আমরা নিজেদের উজাড় করে দেই—দিন, মাস, বছরের পর বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করি। যখন সাফল্যের দোরগোড়ায় এসে পৌঁছাই, মনে হয় এই বুঝি সব কষ্ট সার্থক হলো, তখনই এক অজানা শক্তি যেন টেনে ধরে।

এটি কোনো বাইরের ধাক্কা নয়, বরং ভেতরেরই এক অদৃশ্য প্রাচীর যা আমাদের পূর্ণতা থেকে দূরে রাখে। সত্যিকারের সাফল্য কেবল অর্জনের পরিমাণের মধ্যে থাকে না, বরং তা লুকিয়ে থাকে নিজের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে মানসিক শান্তি খুঁজে নেওয়ার মধ্যে। আর এটাই হলো "নিরানব্বইয়ের বাধা"। এই বাধা আসলে আমাদের ভেতরেরই এক অতৃপ্তি, যা অর্জন করার পরও আমাদের আরও বেশি কিছু পাওয়ার জন্য তাড়িত করে, কখনো থামতে দেয় না।

কিন্তু মনে রাখবেন, এই এই বাধাই আপনার প্রকৃত শক্তির সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। নিরানব্বইয়ের কাছে এসে থেমে যাওয়া মানেই হেরে যাওয়া নয়, বরং এটিই নতুন করে নিজেকে আবিষ্কারের সুযোগ। এই এক শতাংশের ঘাটতিই আপনাকে শেখাবে কীভাবে আরও গভীরে প্রবেশ করতে হয়, নিজের ভেতরের অদম্য শক্তিকে চিনতে হয়, আর কীভাবে চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য শেষ এক ধাপ পাড়ি দিতে হয়। আপনার ভেতরের সেই অতৃপ্তিকেই অজেয় শক্তিতে পরিণত করুন। বিশ্বাস রাখুন, যিনি "নিরানব্বইয়ের বাধা" পেরিয়ে যান, তিনিই প্রকৃত অর্থে বিজয়ী, তিনিই প্রকৃত অর্থে সফল।

রমেশ বাবুর জীবনটা ছিল ছোটবেলার সেই গণিত বইয়ের সমাধানের মতো। হিসেব করে চলতেন, যাতে এক পয়সাও এদিক-ওদিক না হয়। সারাজীবন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে একটা ছোট্ট মুদি দোকান আর শহরে এক চিলতে জমি কিনেছিলেন। স্বপ্ন ছিল একটাই—ছেলেকে ডাক্তার বানাবেন, আর মেয়ের বিয়ে দেবেন ধুমধাম করে। তিল তিল করে টাকা জমিয়েছিলেন, একেবারে ব্যাঙ্কের খাতায় নয়, নিজের হাতে গোনা নোটের বান্ডিলে। তার বিশ্বাস ছিল, নিজের হাতে রাখা টাকাটাই আসল, ব্যাংক-ট্যাংক সব ফাঁকিবাজি।

প্রতিদিন দোকান বন্ধ করে ঘরে ফিরে রাতের খাবার শেষে তিনি তাঁর কাঁথা-বালিশের নিচে রাখা টাকার বান্ডিলটা একবার ছুঁয়ে দেখতেন। মনে মনে হিসেব কষতেন, আর কত হলে তার স্বপ্ন পূরণ হবে। যখন তার জমানো টাকা প্রায় ৯৯ লাখ ছুঁই ছুঁই করছিল, রমেশ বাবুর মনে এক অদ্ভুত অস্থিরতা বাসা বাঁধল। "আর মাত্র এক লাখ! আর মাত্র এক লাখ হলে আমি এক কোটি টাকার মালিক হব!" এই চিন্তাটা তাকে দিনে-রাতে তাড়া করে ফিরত।

তিনি যেন এক নতুন মানুষে পরিণত হলেন। আগে যেখানে সকালে উঠে পূজা-অর্চনা করতেন, এখন তার মনে শুধু টাকার চিন্তা। দোকানে খদ্দের এলে মনে হত, "আহা! যদি আরও বেশি কিছু কিনতে!" লাভ করার নেশাটা যেন তাকে পেয়ে বসেছিল। একবার এক কাস্টমার একটু কম টাকা দিতে চাইলে, রমেশ বাবু রীতিমতো ঝগড়া শুরু করে দিলেন। পাড়ার লোক, যারা এতদিন তাকে ভালোমানুষ হিসেবে জানত, তারাও অবাক হয়ে গেল।

ছেলে সুজন, যে বাবার কঠোর পরিশ্রমে অনুপ্রাণিত হয়ে পড়াশোনা করত, সে দেখল বাবা যেন দিন দিন আরও বেশি হিসেবী আর কৃপণ হয়ে যাচ্ছেন। ছোটখাটো বিষয়েও টাকার হিসেব করতে বসেন, আর অস্থির হয়ে ওঠেন। মায়ের সামান্য জ্বর হলেও বাবা ডাক্তার না দেখিয়ে ঘরোয়া টোটকা দিতে চান, কারণ এতে টাকা খরচ হবে না। সুজন একদিন বাবাকে বলেই ফেলল, "বাবা, এত টাকা জমিয়ে কী হবে? শান্তিটা যদি না থাকে?"

রমেশ বাবু ছেলের কথা কানেই নিলেন না। তার চোখে শুধু এক কোটি টাকার স্বপ্ন। রাত জেগে তিনি হিসেব করতেন, আর ভাবতেন কীভাবে দ্রুত এই এক লাখ টাকা জোগাড় করা যায়। এই অস্থিরতা তাকে এতটাই গ্রাস করল যে, তার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেল। দোকানের বেচাকেনা কমতে শুরু করল, কারণ তার রূঢ় আচরণে অনেক কাস্টমার মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিল। একসময় তার শরীরও ভেঙে পড়ল।

একদিন সকালে, রমেশ বাবু আর ঘুম থেকে উঠলেন না। রাতের বেলা সম্ভবত হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। সুজন আর তার মা যখন তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল, ডাক্তার সাফ জানিয়ে দিলেন, "আর একটু আগে আনলে হয়তো বাঁচানো যেত। মানসিক চাপই মূল কারণ।"

রমেশ বাবুর শেষকৃত্যের পর সুজন যখন বাবার সেই কাঁথা-বালিশের নিচের টাকার বান্ডিল বের করল, দেখল সেখানে ঠিক ৯৯ লাখ টাকা আছে। বাবার স্বপ্ন পূরণ হয়নি। এক কোটি টাকার সেই 'এক লাখ' অধরাই থেকে গিয়েছিল। রমেশ বাবু জীবনে হয়তো সবকিছুই প্রায় পেয়ে গিয়েছিলেন—একটি ভালো পরিবার, নিজের ব্যবসা, আর সম্মান। কিন্তু সেই 'নিরানব্বইয়ের ধাক্কা' তাকে আরও বেশি কিছু পাওয়ার লোভে এমনভাবে অস্থির করে তুলেছিল যে, তার শেষ ১ লাখ টাকার মোহ তার জীবনটাকেই কেড়ে নিল।

সুজন তার বাবার জমানো টাকা দিয়ে মায়ের চিকিৎসা করাল, বোনের বিয়ে দিল আর নিজেই দোকানটা নতুন করে সাজিয়ে ব্যবসা শুরু করল। কিন্তু তার মনে এই শিক্ষাই গেঁথে গেল যে, সবকিছু পাওয়ার জন্য অস্থির হওয়া ঠিক নয়। জীবনে অর্থের প্রয়োজন আছে, কিন্তু তার চেয়েও বড় প্রয়োজন হলো মানসিক শান্তি আর ভালোবাসার সম্পর্ক।

শিশিরকে দেখলে মনে হতো, সে যেন স্বপ্ন বুনতে আর ভাঙতেই জন্মেছে। ওর চোখের গভীরে এক অদম্য জেদ ছিল, যা ওকে বারবার নতুন কিছু শুরু করতে উদ্বুদ্ধ করত। কিন্তু সেই জেদই যেন ওর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ছিল। সে একজন উদ্যোক্তা হতে চায়। অনেক বছর ধরে বিভিন্ন ছোটখাটো ব্যবসার চেষ্টা করেছে—নার্সারি দিয়ে চারা বিক্রি, পুরনো বইয়ের দোকান, এমনকি স্থানীয়ভাবে তৈরি পোশাকের ব্যবসাও। প্রতিবারই সে খুব নিষ্ঠার সাথে কাজ শুরু করে, নিজের সমস্ত শক্তি আর সময় ঢেলে দেয়। কিন্তু বারবারই এক অদৃশ্য প্রাচীরের সামনে এসে থমকে যায়। তার মনে হয়, সে যেন সাফল্যের দোরগোড়ায় এসেও ফিরতে বাধ্য হচ্ছে।

এম এস হাবিবুর রহমান

সবশেষ শিশির শুরু করল অনলাইন শপ। তার ধারণা, ঘরে বসেই অনলাইনে পণ্য বিক্রি করে সে সফল হতে পারবে। নানা ধরনের কসমেটিকস আর ছোট ছোট গিফটের জিনিস সে সংগ্রহ করল। ভালো ছবি তুলে আপলোড করল, পণ্যের বিস্তারিত বিবরণ লিখল, আর রাত-দিন এক করে প্রচারণায় ঝাঁপিয়ে পড়ল। প্রথম কয়েক মাস ভালোই চলল। কিছু অর্ডার আসতে শুরু করল, অল্প অল্প লাভও হচ্ছিল। শিশিরের চোখে তখন নতুন স্বপ্ন। এই বুঝি তার পরিশ্রম সফল হতে চলেছে!

কিন্তু বিপত্তি বাধল ঠিক তখনই। হঠাৎ করেই অর্ডার কমে যেতে লাগল। বিজ্ঞাপন খরচ বাড়ছে, কিন্তু বিক্রি সেই তুলনায় বাড়ছে না। স্টক জমে যাচ্ছে, নতুন পণ্য কেনার টাকা নেই। শিশিরের মনে হলো, সে যেন আবারও সেই চিরচেনা "নিরানব্বইয়ের বাধা"-র সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। সে জানে, শতভাগ প্রচেষ্টার নিরানব্বই ভাগই সে সম্পন্ন করেছে, কিন্তু বাকি এক ভাগের জন্যেই যেন সবকিছু থমকে যাচ্ছে। তার ভেতরের উদ্যম ক্রমশ নিভে আসছিল। একসময় সে পণ্যের মান, অনলাইন মার্কেটিং কৌশল, গ্রাহক সেবা, সবকিছু নিয়ে চরম হতাশায় ভুগতে শুরু করল। মনে হলো, এই বুঝি তার উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন শেষ।

এক বিকেলে হতাশার এক গভীর খাদে ডুবে শিশির তার বন্ধু হাবিবের কাছে গেল। হাবিব, নামের মতোই তার স্বভাব—শান্ত, বিনয়ী ,বিচক্ষণ এবং পরোপকারী স্বভাবের মানুষ। সে কারো ক্ষতি করা তো দূরে থাক, সে কল্পনাও করতে পারে না। বরং সে সব সময় মানুষের ভালো চায়, বিপদে পাশে দাঁড়ায়। শিশিরের হতাশ চেহারা দেখে হাবিব বুঝতে পারল, তার বন্ধু আবারও সেই চেনা জায়গায় এসে পৌঁছেছে। 

শিশির দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার সব হতাশার কথা খুলে বলতে লাগলো হাবিবের কাছে। বুঝতে পারছি না হাবিব, কেন এমন হচ্ছে! প্রতিবারই মনে হয় এই বুঝি সফল হব, কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে সব ভেস্তে যায়। আমি বুঝতে পারি না, আমার সমস্যা কোথায়।

হাবিব মনোযোগ দিয়ে সব শুনল। এরপর শিশিরের কাঁধে হাত রেখে শান্ত গলায় বলল, আবার সেই পুরনো জায়গায় দাঁড়িয়ে আছিস? নিরানব্বইয়ের বাধা? শিশির, তোর পরিশ্রম নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। তুই সত্যিই খুব পরিশ্রমী। কিন্তু অনলাইন ব্যবসা শুধু ভালো পণ্য আর সুন্দর ছবি দিয়ে হয় না। এখানে আরও কিছু বিষয় আছে যা হয়তো তোর চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে।

হাবিব মৃদু হেসে বলল, তোর সমস্যাটা আসলে তোর নিজের হাতেই। তুই নিরানব্বই ভাগ কাজ করে বাকি এক ভাগেই হাল ছেড়ে দিস। এই এক ভাগই হচ্ছে সাফল্যের চাবিকাঠি।

শিশির অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।

হাবিব বোঝাতে শুরু করল, দেখ শিশির, অনলাইনে ব্যবসা মানে শুধু পণ্য আপলোড আর প্রচার নয়। এটা একটা বিশাল জগত। তুই যখন নিরানব্বই ভাগ কাজ করছিস, তখন তোর মতো আরও হাজারো মানুষ একই কাজ করছে। তাহলে আলাদা হবি কীভাবে? এই শেষ এক ভাগেই লুকিয়ে আছে তোর অনন্যতা

হাবিব একে একে শিশিরের অনলাইন ব্যবসার খুঁটিনাটি জানতে চাইল। শিশিরের পণ্যের বিবরণ, ছবি, প্রচারের পদ্ধতি, গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগের ধরন,সবকিছু মন দিয়ে শুনল। তারপর সে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিল:

  • গ্রাহক অভিজ্ঞতা: তুই কি কখনো ভেবে দেখেছিস, তোর গ্রাহকরা কী চায়? শুধু ভালো পণ্য দিলেই হবে না, তাদের একটা অসাধারণ অনলাইন শপিংয়ের অভিজ্ঞতা দিতে হবে। দ্রুত ডেলিভারি, সহজে রিটার্ন করার সুবিধা, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তাদের অভিযোগ বা সমস্যায় দ্রুত এবং আন্তরিকভাবে সাড়া দেওয়া, এগুলোই তোর ব্যবসাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখবে।

  • পণ্যের গল্প: মানুষ এখন শুধু পণ্য কেনে না, তারা গল্প কেনে। তোর পণ্যের পেছনে কী গল্প আছে, কেন তুই এই পণ্যগুলো বেছেছিস, এই পণ্যগুলো তাদের জীবনে কী পরিবর্তন আনতে পারে, এই গল্পগুলো তুলে ধর। মানুষকে তোর পণ্যের সাথে একটা উপকারী সম্পর্ক তৈরি করতে শেখা।

  • ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিং: মানুষ তোর দোকান থেকে কেনার আগে তোকে বিশ্বাস করতে চাইবে। তুই কেমন মানুষ, তোর সততা কতটা, এগুলো মানুষ জানতে চায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় শুধু পণ্য বিক্রি না করে, তোর নিজের একটা পরিচিতি তৈরি কর। টিপস দে, সমস্যার সমাধান দে, যা তোর ক্রেতাদের আকৃষ্ট করবে। অনলাইনে শুধু পণ্য বিক্রি করলেই হয় না, কাস্টমারদের সাথে একটা সম্পর্ক তৈরি করতে হয়। তাদের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানো, নতুন পণ্য এলে তাদের জানানো, এমনকি তাদের ব্যক্তিগত রুচি অনুযায়ী পণ্য সাজেস্ট করা এগুলো ছোট ছোট বিষয় হলেও কাস্টমারদের মনে তোর ব্র্যান্ডের প্রতি আস্থা তৈরি করবে।

  • ধারাবাহিক শেখা ও পরিবর্তন: অনলাইন জগৎ দ্রুত বদলায়। আজ যা চলছে, কাল তা নাও চলতে পারে। তাই নিয়মিত নতুন কিছু শেখার চেষ্টা কর। তোর প্রতিযোগীরা কী করছে, নতুন কী প্রযুক্তি আসছে, গ্রাহকদের চাহিদা কীভাবে বদলাচ্ছে এগুলো সম্পর্কে আপডেটেড থাক। তোর ব্যবসার মডেল প্রয়োজনে পরিবর্তন করতে দ্বিধা করিস না।

হাবিবের কথাগুলো শিশিরের মনে গভীর প্রভাব ফেলল। সে বুঝতে পারল, এত দিন সে শুধু কাজের পরিমাণ নিয়ে ব্যস্ত ছিল, কিন্তু কাজের গুণগত মান আর আধুনিক কৌশলগুলো নিয়ে সেভাবে ভাবেনি। সে যেটুকু করেছে, সেটাকে সে পরিপূর্ণ ভেবেছিল, কিন্তু আসল প্রতিযোগিতা যে বাকি এক শতাংশে, তা সে বুঝতে পারেনি।

শিশির নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করল। হাবিবের পরামর্শ অনুযায়ী সে তার অনলাইন শপের পুরো প্রক্রিয়াটি নতুন করে সাজাল। সে গ্রাহকদের সাথে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করা শুরু করল, তাদের ফিডব্যাক নিয়ে পণ্যের মান উন্নত করল। সে নিজের ব্র্যান্ডিংয়ের দিকে মনোযোগ দিল, পণ্যের পেছনের গল্পগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরল। ধীরে ধীরে তার অনলাইন শপ আবার নতুন করে গতি পেতে শুরু করল।

কয়েক মাস পর শিশিরের মুখে অনাবিল হাসি। তার ব্যবসা এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো চলছে। লাভ হচ্ছে, গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জন করতে পারছে, এবং সবচেয়ে বড় কথা, সে এখন আর সেই "নিরানব্বইয়ের বাধা" দেখে ঘাবড়ে যায় না। সে জানে, শেষ এক শতাংশেই আসল চ্যালেঞ্জ আর সেই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করলেই আসে প্রকৃত সাফল্য।

শিশির হাবিবকে ধন্যবাদ দিতে গিয়ে বলল, তোর পরামর্শ না পেলে হয়তো আমি সেদিনই হাল ছেড়ে দিতাম। তুই আমায় শিখিয়েছিস যে, নিরানব্বই ভাগ কাজ করার পর যে বাকি এক ভাগ থাকে, সেটাই আসল খেলা। সেখানেই হেরে গেলে সব পরিশ্রম বৃথা।

হাবিব হাসল। আসলে, উদ্যোক্তা হওয়াটা একটা নিরন্তর শেখার প্রক্রিয়া। যখনই মনে হবে তুই সব করে ফেলেছিস, তখনই বুঝবি তোর আরও অনেক কিছু শেখার বাকি আছে। এই শেষ এক শতাংশকে জয় করাই তোর সাফল্যের গল্প।

বি: দ্র: গল্পের চরিত্র কাল্পনিক, কারো সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ