আমরা দৈনন্দিন জীবনের নানা ব্যস্ততায় এমনভাবে জড়িয়ে পড়ি যে ছোট ছোট প্রাপ্তিগুলো প্রায়শই আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। আমরা প্রতিনিয়ত আরও বেশি কিছু পাওয়ার আশায় ছুটে চলি, আর এই ছুটে চলার পথে হারিয়ে ফেলি সেই মানসিক শান্তি যা আমাদের হাতে থাকা জিনিসগুলোকে মূল্য দিতে শেখায়। আর এখানেই আসে কৃতজ্ঞতাবোধের প্রশ্ন। কেবল বিশেষ কোনো দিনে নয়, প্রতি মুহূর্তে কৃতজ্ঞ থাকাটা আমাদের মানসিক সুস্থতার জন্য কতটা জরুরি, তা আমরা অনেকেই উপলব্ধি করি না।
কৃতজ্ঞতাবোধ কোনো বিলাসিতা নয়, এটি এক ধরনের মানসিক অভ্যাস যা আপনার জীবনকে সম্পূর্ণ নতুনভাবে দেখতে সাহায্য করে। যখন আপনি প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে আলো ঝলমলে সকালের জন্য, আপনার প্রিয়জনের হাসির জন্য, অথবা এক কাপ গরম চায়ের জন্যও কৃতজ্ঞতা অনুভব করেন, তখন আপনার মস্তিষ্কে ইতিবাচক হরমোন নিঃসৃত হয়। এটি চাপ কমায়, বিষণ্নতার বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি যোগায় এবং সামগ্রিকভাবে আপনার মেজাজকে উন্নত করে। গবেষণা দেখায়, যারা নিয়মিত কৃতজ্ঞতা অনুশীলন করেন, তারা অন্যদের চেয়ে বেশি সুখী, আশাবাদী এবং মানসিকভাবে স্থিতিশীল থাকেন।
কৃতজ্ঞতাবোধ আপনাকে বর্তমানের সঙ্গে সংযুক্ত করে। আমরা প্রায়শই অতীত নিয়ে অনুশোচনা করি অথবা ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকি। কিন্তু যখন আমরা আজকের দিনটিতে প্রাপ্তিগুলোর জন্য কৃতজ্ঞ হই, তখন আমরা বর্তমান মুহূর্তের সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারি। যেমন, সকালে ঘুম থেকে উঠে সতেজ বাতাস নেওয়া, এক কাপ গরম চা পান করা, বা প্রিয়জনের একটি হাসি, এই সবকিছুই কৃতজ্ঞতার কারণ হতে পারে। এই ছোট ছোট বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগী হওয়া আপনাকে মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
কৃতজ্ঞতা কেবল আপনার নিজের জীবনকে উন্নত করে না, এটি আপনার চারপাশের মানুষের সাথে আপনার সম্পর্ককেও মজবুত করে। যখন আপনি আপনার বন্ধু, পরিবার বা সহকর্মীর ছোট ছোট সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, তখন তারা সম্মানিত বোধ করে এবং সম্পর্কগুলো আরও গভীর হয়। মানুষ আপনার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে এবং আপনার সামাজিক বন্ধন আরও মজবুত হয়। এটি কেবল আপনারই নয়, অন্যদেরও ইতিবাচক শক্তি যোগায়।
বাস্তব জীবনে এর অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। ধরুন, একজন ব্যক্তি যিনি দীর্ঘ অসুস্থতার পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তার কাছে সুস্থ জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই অমূল্য। তিনি প্রতিটি নিঃশ্বাসের জন্য, প্রতিটি নতুন দিনের জন্য কৃতজ্ঞ। এই কৃতজ্ঞতাবোধ তাকে আরও ইতিবাচক এবং শক্তিশালী করে তোলে। আবার একজন শিক্ষার্থী, যে হয়তো কঠিন পরিশ্রমের পর ভালো ফল করেছে, সে তার শিক্ষক, অভিভাবক এবং নিজের চেষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞ। এই কৃতজ্ঞতাবোধ তাকে ভবিষ্যতে আরও ভালো করার অনুপ্রেরণা যোগায়।
কৃতজ্ঞতা অনুশীলনের জন্য খুব বেশি কিছু দরকার হয় না। প্রতিদিন সকালে উঠে কয়েকটি জিনিসের কথা ভাবুন যার জন্য আপনি কৃতজ্ঞ। রাতে ঘুমানোর আগে একটি 'কৃতজ্ঞতা ডায়েরি'তে দিনের ভালো ঘটনাগুলো লিখে রাখুন। ছোট ছোট জিনিস নিয়ে খুশি হতে শিখুন। দেখবেন, আপনার জীবন ধীরে ধীরে আরও সুন্দর ও অর্থপূর্ণ হয়ে উঠছে।
আজ থেকেই আপনার দিনের শুরুটা হোক কৃতজ্ঞতার সাথে। আপনার জীবনের ছোট ছোট আশীর্বাদগুলোকে চিহ্নিত করুন এবং সেগুলোর জন্য মন থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। আপনার ভেতরের শান্তি এবং খুশি ফিরে পেতে এই অভ্যাসটি আপনাকে অভাবনীয়ভাবে সাহায্য করবে। আপনি কি প্রস্তুত আপনার জীবনকে আরও সুন্দর করে তুলতে?
লেখক: এম এস হাবিবুর রহমান, সম্পাদক ও প্রকাশক, নিউজ সমাহার।
0 মন্তব্যসমূহ