Header Ads Widget


 

বৈদেশিক উৎস থেকে আয়ের (Foreign Income) উপর কি বাংলাদেশে ট্যাক্স দিতে হয়?

ডিজিটাল ল' অ্যান্ড কনসালট্যান্সি ফার্ম লিমিটেড-এর পক্ষ থেকে আমরা প্রায়শই যে প্রশ্নটি পেয়ে থাকি, তা হলো "বৈদেশিক উৎস থেকে আয়ের (Foreign Income) উপর কি বাংলাদেশে ট্যাক্স দিতে হয়?" এই বিষয়টি অনেক প্রবাসী বাংলাদেশী এবং আন্তর্জাতিক লেনদেনে জড়িত ব্যক্তিদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বাংলাদেশের আয়কর আইন, ২০২৩ অনুসারে এই বিষয়টি বেশ সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

Foreign Income

সংক্ষিপ্ত উত্তর: হ্যাঁ, বাংলাদেশের আয়কর আইন অনুযায়ী, একজন "নিবাসী" (Resident) ব্যক্তির বৈদেশিক আয় বাংলাদেশে করযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

বিস্তারিত আলোচনা:

বাংলাদেশের আয়কর ব্যবস্থায় করযোগ্য আয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যক্তির "আবাসিক মর্যাদা" (Residential Status) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আয়কর আইন ২০২৩ অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি যদি নিম্নলিখিত শর্ত পূরণ করেন, তবে তিনি বাংলাদেশে করের জন্য "নিবাসী" বলে গণ্য হবেন:

১. ১লা জুলাই থেকে ৩০শে জুন পর্যন্ত যেকোনো আয়বর্ষে ১৮২ দিন বা তার বেশি সময় বাংলাদেশে অবস্থান করেন।

২. অথবা, যদি তিনি ৯০ দিন বা তার বেশি সময় বাংলাদেশে অবস্থান করেন এবং বিগত ৪ (চার) বছরে মোট ৩৬৫ দিন বা তার বেশি সময় বাংলাদেশে অবস্থান করে থাকেন।

যদি কোনো ব্যক্তি উপরিউক্ত শর্তাবলী পূরণ করেন এবং "নিবাসী" হিসেবে বিবেচিত হন, তাহলে তার "বৈশ্বিক আয়" (Global Income) বাংলাদেশে করযোগ্য হবে। এর অর্থ হলো, তিনি দেশের বাইরে থেকে যে কোনো প্রকার আয় (যেমন: বেতন, ব্যবসার লাভ, ভাড়া, মূলধনী লাভ, ইত্যাদি) অর্জন করেন, তা বাংলাদেশে তার মোট আয়ের সাথে যুক্ত হবে এবং প্রযোজ্য আয়কর হারে কর প্রদান করতে হবে।

করহার:

ব্যক্তি পর্যায়ে বৈদেশিক আয়ের উপর করের হার ব্যক্তির মোট আয়কর স্তর অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। সাধারণত, বাংলাদেশে ব্যক্তি আয়করের হার প্রগতিশীল, অর্থাৎ আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে করের হারও বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে, ব্যবসায়িক আয়ের ক্ষেত্রে কোম্পানি করের নির্ধারিত হার প্রযোজ্য হবে।

যেসব ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি বা বিশেষ বিবেচনা প্রযোজ্য হতে পারে:

যদিও নিবাসী ব্যক্তির সকল বৈদেশিক আয় করযোগ্য, কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বা ছাড় থাকতে পারে:

দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি (Double Taxation Avoidance Agreement - DTAA): বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৬টিরও বেশি দেশের সাথে দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তিগুলোর উদ্দেশ্য হলো একই আয়ের উপর দুটি দেশে যাতে কর না দিতে হয়, তা নিশ্চিত করা। যদি কোনো ব্যক্তি এমন একটি দেশের আয়কর নিবাসী হন যার সাথে বাংলাদেশের দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি রয়েছে, তবে তিনি সেই চুক্তির আওতায় কর সুবিধা পেতে পারেন। এক্ষেত্রে, ওই ব্যক্তি বিদেশী আয়ের উপর যে কর পরিশোধ করেছেন, তা বাংলাদেশের কর দায় থেকে সমন্বয় করার সুযোগ পেতে পারেন। এই সুবিধা পাওয়ার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) থেকে নির্দিষ্ট সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে হয়।

রেমিট্যান্স: প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে পূর্বে কিছু নির্দিষ্ট পরিমাণ করমুক্তির বিধান ছিল। তবে, ২০২৩ সালের আয়কর আইন অনুযায়ী রেমিট্যান্সের উপরও করের বিধান এসেছে, বিশেষ করে যদি তা উপহার হিসেবে আসে। এই বিষয়ে সর্বশেষ বিধানাবলী সম্পর্কে নিশ্চিত হতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা অনুসরণ করা জরুরি।

অনিবাসী বাংলাদেশী এবং বিদেশী নাগরিকদের ক্ষেত্রে:

১. অনিবাসী বাংলাদেশী (Non-resident Bangladeshi): যে সকল বাংলাদেশী নাগরিক উপরে উল্লিখিত শর্ত পূরণ না করার কারণে বাংলাদেশে "নিবাসী" বলে গণ্য হন না, তাদের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বাংলাদেশে অর্জিত বা উদ্ভূত আয় বাংলাদেশে করযোগ্য হবে। তাদের বৈদেশিক আয়ের উপর বাংলাদেশে কর প্রযোজ্য হবে না, যদি না সেই আয় বাংলাদেশে গৃহীত হয় বা বাংলাদেশে উদ্ভূত বলে বিবেচিত হয়।

২. বিদেশী নাগরিক (Foreign Nationals): বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের ক্ষেত্রেও তাদের আবাসিক মর্যাদা অনুযায়ী করযোগ্য আয় নির্ধারিত হয়। যদি তারা বাংলাদেশে "নিবাসী" বলে গণ্য হন, তাহলে তাদের বৈশ্বিক আয় করযোগ্য হবে। আর যদি তারা "অনিবাসী" হন, তবে শুধুমাত্র বাংলাদেশে অর্জিত বা উদ্ভূত আয় করযোগ্য হবে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী:

 * সঠিক তথ্য উপস্থাপন: বৈদেশিক আয়ের সঠিক তথ্য আয়কর রিটার্নে উপস্থাপন করা অত্যন্ত জরুরি। ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্য প্রদানের জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে।

 * বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: বৈদেশিক আয়ের করযোগ্যতা এবং দ্বৈত কর পরিহার চুক্তির সুবিধা গ্রহণের জন্য একজন অভিজ্ঞ কর আইনজীবী বা পরামর্শকের সাথে আলোচনা করা বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ, প্রতিটি ব্যক্তির পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে এবং আইনগত ব্যাখ্যায় জটিলতা থাকতে পারে।

বাংলাদেশের আয়কর আইন, ২০২৩ বৈদেশিক আয়ের উপর করের বিষয়টি স্পষ্ট করেছে। নিবাসী ব্যক্তির ক্ষেত্রে তার বৈশ্বিক আয় করযোগ্য হবে, তবে দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি এবং অন্যান্য বিশেষ বিধানের অধীনে কিছু সুবিধা পাওয়ার সুযোগ থাকতে পারে। ডিজিটাল ল' অ্যান্ড কনসালট্যান্সি ফার্ম লিমিটেড সর্বদা আপনার আইনি এবং কর সংক্রান্ত বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা প্রদানের জন্য প্রস্তুত। আজই আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন ।

তথ্যসূত্র:

* জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (National Board of Revenue - NBR), বাংলাদেশ আয়কর আইন, ২০২৩
* Dr. Gazi & Associates: "বৈদেশিক আয়ের উপর আয়কর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা" (drgaziandassociates.law)
* PwC Worldwide Tax Summaries Online: "Bangladesh - Individual - Taxes on personal income" (taxsummaries.pwc.com)
* BIDA: "Double Taxation Treaties" (bida.gov.bd)
* LegalSeba: "Double Taxation Avoidance Procedure in Bangaldesh" (legalseba.com)


ডিসক্লেইমার:

এই পোস্টটি শুধুমাত্র তথ্যভিত্তিক এবং সাধারণ জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে পোস্ট করা হয়েছে। আইনি পরামর্শের জন্য ডিজিটাল ল’ অ্যান্ড কনসালট্যান্সি ফার্ম লিমিটেড-এর অভিজ্ঞ পরামর্শকদের সাথে যোগাযোগ করুন ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ