আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে, যারা ক্ষণিকের লাভের জন্য নিজেদের বিবেক, নীতি-নৈতিকতা এমনকি সম্মানটুকুও বিক্রি করে দেয়। এর পরিণতি যে কতো ভয়াবহ হতে পারে, তা তারা হয়তো বোঝে না। এই কাজগুলো যেন "লবণ দিয়ে শসা খাওয়ার" মতো, যা সাময়িক তৃপ্তি দিলেও দীর্ঘমেয়াদে শরীর ও সমাজ দু'টোকেই শেষ করে দেয়।
কথায় আছে, "লবণ দিয়ে শসা খেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ে!" কিন্তু এটা শুধু আপনার শরীরের জন্য নয়, এটা সমাজের জন্যও চরম ক্ষতিকর। আমাদের সমাজে কিছু মানুষ আছে, যারা নিজেদের সামান্য স্বার্থের জন্য নীতি-নৈতিকতা আর বিবেককে বিসর্জন দেয়। তারা অল্প সময়ের লাভের জন্য এমন কাজ করে, যা দীর্ঘমেয়াদে নিজেদের এবং পুরো সমাজের জন্য বিপদ ডেকে আনে। সমাজের প্রতিটি স্তরে যখন সততা, মানবিকতা আর মূল্যবোধের বদলে স্বার্থপরতা আর দুর্নীতি ছেয়ে যায়, তখনই বুঝতে হবে, সেই সমাজ লবণ দিয়ে শসা খাচ্ছে। এর ফলে আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ, সংস্কৃতি আর ভবিষ্যৎ সবই আজ হুমকির মুখে! এই রূপকটা কেবল কিছু মানুষের ব্যক্তিগত অনৈতিকতাকে বোঝায় না, এটা আসলে পুরো সমাজের অবক্ষয়কে তুলে ধরে।
এই প্রবন্ধে আমরা শুধু শসায় লবণ ব্যবহারের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিয়েই কথা বলব না, বরং এই রূপকটিকে ব্যবহার করে সমাজের নানা স্তরে ছড়িয়ে থাকা নৈতিক ও চারিত্রিক অবক্ষয়গুলোকেও তুলে ধরার চেষ্টা করব। কীভাবে লোভ, স্বার্থপরতা আর অবিশ্বাসের বিষবাষ্প আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক, সামাজিক কাঠামো আর রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাকে দুর্বল করে দিচ্ছে, তা নিয়েও আমরা আলোচনা করব। আসুন, এই লেখার মধ্য দিয়ে আমরা নিজেদের ভেতরের এবং বাইরের জগতটাকে আরও ভালোভাবে চিনি এবং একটি সুস্থ ও সুন্দর সমাজ গড়ার অঙ্গীকার করি।
শসা, যা আমরা সবজি হিসেবে চিনি, আসলে এটি একটি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর ফল। এতে প্রায় ৯৬% পানি থাকে, যা আমাদের শরীরকে সতেজ রাখতে দারুণ সাহায্য করে। এছাড়াও শসায় আছে ভিটামিন K, ভিটামিন C, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার এবং আরও অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা আমাদের ওজন কমাতে, হজমশক্তি বাড়াতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আর ত্বক সুন্দর রাখতে দারুণ কাজে লাগে।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এই উপকারী শসাতে যখন আমরা লবণ মিশিয়ে খাই, তখন এর উপকারিতা কমে গিয়ে উল্টো কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। পুষ্টিবিদরা গবেষণায় যা বলছেন, তা শুনলে আপনি অবাক হবেন:
লবণে থাকা সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়াতে ওস্তাদ! পুষ্টিবিদরা বলেন, অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ করলে রক্তচাপ হু হু করে বাড়ে। আর যখন শসায় বাড়তি লবণ যোগ করি, তখন শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়। এতে রক্তে পানির পরিমাণ বাড়ে আর রক্তনালীর ওপর চাপ সৃষ্টি হয়, যা সরাসরি রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। মনে রাখবেন, উচ্চ রক্তচাপ মানেই হৃদরোগ, স্ট্রোক আর কিডনি রোগের মতো ভয়ঙ্কর বিপদের হাতছানি!
ভাবছেন, শসায় তো প্রচুর পানি, তাহলে ডিহাইড্রেশন কেন? আসলে, লবণের কারণে শসার কোষ থেকে পানি বেরিয়ে আসে (বিজ্ঞানীরা যাকে Osmosis বলেন)। এর ফলে শসার প্রাকৃতিক পানীয় গুণটা কিছুটা কমে যায়। অবাক করা ব্যাপার হলো, শসা খেয়েও আপনার উল্টো তৃষ্ণা বেড়ে যেতে পারে। তাই, শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে গিয়ে অতিরিক্ত লবণ মেশালে হিতে বিপরীত হতে পারে।
কিছু পুষ্টিবিদ বলছেন, অতিরিক্ত লবণ আমাদের হজম প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়। এমনকি, এটা পাকস্থলীর দেয়ালে ক্ষত তৈরি করে অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়াতে পারে। তখন খাবার ঠিকমতো হজম হয় না, বমি বমি ভাব হয় আর পেট ফুলে যায়।
আমাদের কিডনি শরীরের অতিরিক্ত লবণ আর পানি বের করে দেওয়ার কাজটা করে। কিন্তু যখন আমরা মাত্রাতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ করি, তখন কিডনিকে অনেক বেশি খাটতে হয়। দীর্ঘমেয়াদে এর ফলে কিডনির কার্যকারিতা কমে যেতে পারে, যা খুবই চিন্তার বিষয়।
পুষ্টিবিদদের মতে, লবণ যোগ করলে শসার প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদানের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। বিশেষ করে, যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য লবণ ছাড়া শসা খাওয়া অনেক বেশি উপকারী। কারণ লবণ শরীরকে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে, যা সাময়িকভাবে আপনার ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে।
বেশিরভাগ পুষ্টিবিদই পরামর্শ দেন, শসা বা যেকোনো ফল/সবজি লবণ ছাড়া খাওয়াই সবচেয়ে ভালো। যদি স্বাদ বাড়ানোর জন্য কিছু যোগ করতেই হয়, তাহলে সামান্য গোলমরিচ, লেবুর রস বা অল্প পরিমাণে অন্যান্য প্রাকৃতিক মশলা ব্যবহার করা যেতে পারে। শসার সম্পূর্ণ পুষ্টিগুণ পেতে হলে খোসাসহ এবং লবণ ছাড়া খাওয়াই আদর্শ।
পয়েন্ট-২
আমাদের সমাজে পরকীয়া সম্পর্ক একটি ক্রমবর্ধমান ব্যাধি, যা শুধু ব্যক্তিকেই নয়, পুরো পরিবার এবং সামাজিক কাঠামোকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এই সম্পর্কগুলো জন্ম দেয় অবিশ্বাস, কষ্ট, এবং দীর্ঘস্থায়ী মানসিক যন্ত্রণার। একটি সুখী ও স্থিতিশীল পরিবার ভেঙে যাওয়া মানেই সমাজে অস্থিরতা বৃদ্ধি পাওয়া। কিন্তু এই গভীর অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসার কি কোনো পথ নেই? আছে, আর সেই পথ নিজেদের ভেতরের শক্তি আর চারিত্রিক দৃঢ়তার মাধ্যমেই তৈরি করতে হবে।
পরকীয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। কখনো দাম্পত্য জীবনে একঘেয়েমি, কখনো সঙ্গীর প্রতি আকর্ষণ কমে যাওয়া, কখনো বা নিজের জীবনে নতুনত্বের খোঁজ। আবার অনেক সময় মানসিক দূরত্ব, সঙ্গীর কাছ থেকে পর্যাপ্ত মনোযোগ বা ভালোবাসা না পাওয়া, অথবা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের অভাবও এর জন্য দায়ী। সোশ্যাল মিডিয়ার সহজলভ্যতা এবং অবাধ মেলামেশার সুযোগও অনেক সময় পরকীয়ার পথ খুলে দেয়। কিন্তু এই কারণগুলো কি সত্যিই একটি পবিত্র সম্পর্ক ভেঙে ফেলার জন্য যথেষ্ট?
পরকীয়া যখন প্রকাশ্যে আসে, তখন তার ফল হয় ভয়াবহ। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অবিশ্বাস আর ঘৃণা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। সন্তানরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে এবং তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। পারিবারিক কলহ, বিচ্ছেদ, এবং অনেক ক্ষেত্রে আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটে থাকে। সমাজের এই চিত্র দেখে আমরা কি হাত গুটিয়ে বসে থাকব?
পরকীয়া একটি অন্ধকার সুড়ঙ্গ, যেখানে একবার প্রবেশ করলে আলোর মুখ দেখা কঠিন। তবে, এই সামাজিক ব্যাধি থেকে উত্তরণের পথ সম্পূর্ণভাবে আমাদের নিজেদের হাতেই। প্রয়োজন আত্মিক শক্তি, নৈতিকতা এবং নিজেদের সম্পর্ককে পুনর্গঠন করার সদিচ্ছা।
দাম্পত্য জীবনে স্বচ্ছতা ও খোলামেলা আলোচনা সবচেয়ে জরুরি। একে অপরের অনুভূতি, চাওয়া-পাওয়া এবং অভিযোগগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনুন। দৈনন্দিন ব্যস্ততার মাঝেও নিজেদের জন্য সময় বের করুন। একসঙ্গে ঘুরতে যান, গল্প করুন, একে অপরের প্রতি আগ্রহ দেখান।
যেকোনো সম্পর্কের শুরুতেই ভালোবাসা আর টানটান উত্তেজনা থাকে। সময়ের সাথে সাথে তা ফিকে হতে পারে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে ভালোবাসা ফুরিয়ে গেছে। বরং, পুরনো স্মৃতিগুলোকে স্মরণ করুন, নিজেদের প্রথম দিকের দিনগুলো মনে করুন। নতুন করে একে অপরের প্রতি মুগ্ধতা খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। ছোট ছোট উপহার, প্রশংসা বা ভালোবাসার প্রকাশ সম্পর্ককে চাঙ্গা করতে পারে।
পরকীয়া থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো চারিত্রিক দৃঢ়তা। নিজের নৈতিক মূল্যবোধকে জাগ্রত করুন। মনে রাখবেন, ক্ষণিকের ভালো লাগা বা উত্তেজনার জন্য একটি দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক এবং পরিবারকে ধ্বংস করা কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। নিজের প্রতিশ্রুতি, সম্মান এবং বিশ্বাসকে মূল্য দিন। আত্মনিয়ন্ত্রণ শিখুন। কোনো অনৈতিক প্রস্তাব এলে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করুন।
যদি সম্পর্ক এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় যে নিজেরা সমাধান করতে পারছেন না, তবে একজন পেশাদার মনোবিজ্ঞানী বা ম্যারেজ কাউন্সেলরের সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না। তারা আপনাদের সমস্যাগুলো বিশ্লেষণ করে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারবেন।
যদি ভুল হয়েই যায়, তাহলে অনুশোচনা এবং ক্ষমা চাওয়া খুব জরুরি। যিনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তার প্রতি সহানুভূতি দেখান। ক্ষমা চাওয়া এবং ক্ষমা করার মানসিকতা সম্পর্ককে নতুন জীবন দিতে পারে।
পরকীয়া একটি সাময়িক মোহ ছাড়া আর কিছুই নয়। এর শেষ পরিণতি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয় ভয়াবহ। যদি, আমরা সকলে মিলে এই সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। নিজেদের সম্পর্ককে গুরুত্ব দেই, একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাড়াই এবং চারিত্রিক দৃঢ়তার মাধ্যমে একটি সুন্দর ও সুস্থ সমাজ গড়ে তুলি। তাহলে, সত্যিকারের সুখ ক্ষণিকের উত্তেজনায় নয়, বরং ভালোবাসা, বিশ্বাস আর ত্যাগের মাধ্যমেই পাওয়া যাবে।
পয়েন্ট-৩
গোয়েন্দাগিরি বা গুপ্তচরবৃত্তি, শুনতে হয়তো সিনেমার মতো রোমাঞ্চকর মনে হতে পারে। কিন্তু এর আড়ালে লুকিয়ে আছে এক অন্ধকার জগৎ, যা ব্যক্তি, সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য বয়ে আনে চরম সর্বনাশ। গুপ্তচরের কাজ কেবল তথ্য চুরি করা নয়, এটি এমন এক অদৃশ্য জাল, যা সম্পর্কের ভিত নড়বড়ে করে দেয়, কেড়ে নেয় বিশ্বাস আর ঠেলে দেয় চরম অবক্ষয়ের দিকে।
গুপ্তচরবৃত্তি প্রথমে আঘাত হানে আস্থার ওপর। যখন একজন ব্যক্তি, হোক সে বন্ধু, সহকর্মী বা পরিবারের সদস্য, গোপনে তথ্য পাচার করে বা বিশ্বাস ভঙ্গ করে, তখন সম্পর্কের সব উষ্ণতা নিভে যায়। যে সমাজে মানুষ একে অপরের ওপর ভরসা রাখতে পারে না, সে সমাজ কখনোই সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকতে পারে না। কর্মক্ষেত্রে গুপ্তচরবৃত্তি কর্মীদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে, উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয় এবং এক অস্থির পরিবেশ সৃষ্টি করে। ব্যক্তিগত জীবনে এর প্রভাব আরও ভয়াবহ; সন্দেহের বিষবাষ্প পারিবারিক শান্তি কেড়ে নেয়, মানসিক যন্ত্রণার কারণ হয়।
গুপ্তচরবৃত্তি মানুষকে নৈতিকতার পথ থেকে বিচ্যুত করে। একজন গুপ্তচরকে প্রায়শই মিথ্যা বলতে হয়, প্রতারণা করতে হয় এবং গোপনে এমন সব কাজ করতে হয় যা তার বিবেককে প্রশ্নবিদ্ধ করে। অর্থের লোভে বা ক্ষমতার মোহে যখন কেউ নিজের নীতি-আদর্শকে বিসর্জন দেয়, তখন সে ধীরে ধীরে মনুষ্যত্ব হারায়। এর ফলে সমাজের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে, কারণ নৈতিক মূল্যবোধ ছাড়া কোনো সমাজই টিকে থাকতে পারে না। একজন গুপ্তচরের নিজের ভেতরের দ্বন্দ্ব তাকে অস্থির করে তোলে, মানসিক শান্তি নষ্ট করে দেয়।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে গুপ্তচরবৃত্তি দেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি। স্পর্শকাতর তথ্য পাচার, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা ফাঁস করা, বা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপের পথ তৈরি করা – এসবই একটি দেশকে ভয়াবহ বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে। এর ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং এমনকি যুদ্ধও বাঁধতে পারে। দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে একজন গুপ্তচর কেবল নিজের বিবেককেই বিক্রি করে না, সে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকেও ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়।
গুপ্তচরবৃত্তির সাথে জড়িত ব্যক্তিরা এক ধরনের চারিত্রিক অবক্ষয়ের মধ্য দিয়ে যায়। তারা মিথ্যা, ছলনা আর গোপনীয়তার বেড়াজালে আটকা পড়ে যায়। এই জীবন তাদের ভেতর থেকে সৎ গুণাবলীগুলো নষ্ট করে দেয়। তাদের মধ্যে দেখা যায় ভয়, সন্দেহ, এবং এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা। তারা সমাজ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখে, কারণ তাদের কাজের প্রকৃতি তাদের স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ার সুযোগ দেয় না। একসময় তারা নিজেদের মধ্যে একাকী হয়ে পড়ে, যেখানে সম্মান বা শান্তি খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যায়।
আমরা কি এমন একটি সমাজ চাই, যেখানে অবিশ্বাস আর প্রতারণা আমাদের মূল্যবোধগুলোকে গ্রাস করবে? নিশ্চয়ই না! প্রতিটি মানুষের জীবনে নৈতিকতা, সততা আর বিশ্বাস সবচেয়ে বড় সম্পদ। যদি, আমরা এই ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে সচেতন হই। লোভ, মোহ বা ক্ষমতার হাতছানিতে অন্ধকার পথে পা না বাড়াই। আপনার একটি সৎ পদক্ষেপ, আপনার একটি নৈতিক সিদ্ধান্তই পারে একটি সুন্দর ও নির্ভরযোগ্য সমাজ গড়তে। নিজেকে প্রশ্ন করুন: আমি কি আমার বিবেক বিক্রি করে দেব, নাকি সততার পথে অবিচল থাকব? উত্তরটা আপনার হাতেই!
পয়েন্ট-৪
আমাদের সমাজে এক নীরব ব্যাধি প্রতিনিয়ত ছড়িয়ে পড়ছে, যা অজান্তেই নষ্ট করে দিচ্ছে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক, বিশ্বাস এবং আত্মিক শান্তি। এই ব্যাধিগুলো হলো গীবত, পরনিন্দা, পর-চর্চা ও চোগলখুরী। ইসলামে এই বিষয়গুলো অত্যন্ত কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু শরীয়ত নয়, তরিকত, হাকিকত ও মারেফতের আলোকেও এই অভ্যাসগুলো আত্মার জন্য বিষতুল্য।
ইসলামী শরীয়তে গীবত অর্থ হলো, কোনো ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার এমন কোনো দোষের আলোচনা করা, যা সে অপছন্দ করে। চাই সেই দোষ বাস্তবে তার মধ্যে থাকুক বা না থাকুক। যদি সেই দোষ বাস্তবে না থাকে, তবে তা আরও গুরুতর অপরাধ, যা অপবাদ বা মিথ্যা অপবাদ হিসেবে গণ্য হয়।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা গীবতকে মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন। সূরা হুজুরাতের ১২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, "আর তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের মাংস খেতে পছন্দ করবে? তোমরা তো তা অপছন্দই করো।" (৪৯:১২) এই আয়াতটি গীবতের ভয়াবহতা সম্পর্কে আমাদের বিবেককে নাড়া দেয়।
নবী করীম (সা.) বলেছেন, "গীবত হলো তোমার ভাইয়ের এমন কিছু উল্লেখ করা, যা সে অপছন্দ করে।" (সহীহ মুসলিম) এই হাদীস স্পষ্ট করে দেয় যে, অন্যের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে নেতিবাচক আলোচনা করা শুধু অন্যায় নয়, বরং ইসলামী নীতি ও মূল্যবোধের পরিপন্থী।
চোগলখুরী (কান কথা লাগানো) আরও জঘন্য অপরাধ। এর অর্থ হলো, একজনের কথা অন্যজনের কাছে এমনভাবে বলা, যাতে তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি হয় বা সম্পর্ক নষ্ট হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না।" (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম) এই ধরনের আচরণ সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করে।
শরীয়তের বাইরেও তরিকত, হাকিকত ও মারেফত-এর গভীরতর স্তরে গীবত ও পরনিন্দা আত্মার জন্য এক মহাব্যাধি।
তরিকতের পথে চলতে হলে আত্মশুদ্ধি অপরিহার্য। গীবত ও পরনিন্দা আমাদের আত্মাকে কলুষিত করে। এর মাধ্যমে আমাদের অন্তর হিংসা, বিদ্বেষ ও অহংকার দ্বারা পূর্ণ হয়ে যায়, যা আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথে বড় বাধা। একজন সালিক (তরিকতের পথিক) কখনো অন্যের দোষ চর্চায় লিপ্ত হতে পারেন না, কারণ তার লক্ষ্য থাকে নিজের নফসকে পরিশুদ্ধ করা।
হাকিকত হলো সত্যের উপলব্ধি। যখন আমরা এই সত্য অনুধাবন করি যে, প্রতিটি মানুষই আল্লাহর সৃষ্টি এবং তাদের সম্মান আল্লাহরই সম্মান, তখন অন্যের দোষ চর্চা করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। একজন প্রকৃত জ্ঞানী ব্যক্তি অন্যের ত্রুটি না দেখে নিজের ত্রুটি অনুসন্ধানেই ব্যস্ত থাকেন।
মারেফত বা আল্লাহকে জানার পথে গীবত এক বিশাল প্রতিবন্ধক। মারেফতের মূল কথা হলো, আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা এবং দয়া। অন্যের অনুপস্থিতিতে তার দোষ চর্চা করা এই ভালোবাসার পরিপন্থী। যারা মারেফতের পথে অগ্রসর হতে চান, তাদের অন্তর অবশ্যই সকল প্রকার নেতিবাচকতা থেকে মুক্ত রাখতে হবে। অন্যের ব্যক্তিগত জীবন বা দোষ ত্রুটি নিয়ে আলোচনা করা কেবল সময় নষ্ট নয়, এটি আত্মার ওপর একটি কালো দাগ ফেলে দেয়।
এই ভয়াবহ সামাজিক ও আত্মিক ব্যাধি থেকে উত্তরণের উপায় আমাদের নিজেদের হাতেই। প্রয়োজন দৃঢ় সংকল্প এবং চারিত্রিক গুণাবলীর বিকাশ।
প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করা। আমাদের মুখ থেকে বের হওয়া প্রতিটি কথার হিসাব দিতে হবে। কথা বলার আগে চিন্তা করুন, "এই কথাটি কি ভালো, নাকি খারাপ? এটি কি উপকার করবে, নাকি ক্ষতি করবে?" রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যে আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।" (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
অন্যের দোষ খোঁজা বন্ধ করে নিজের দোষ-ত্রুটিগুলো নিয়ে চিন্তা করুন। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে নিজের সারাদিনের কার্যকলাপের হিসাব নিন। কোথায় ভুল করেছেন, কোথায় অন্যায় করেছেন, তা চিহ্নিত করুন এবং তওবা করুন। যখন আপনি নিজের দুর্বলতাগুলো উপলব্ধি করতে পারবেন, তখন অন্যের দুর্বলতা নিয়ে কথা বলার আগ্রহ কমে যাবে।
সকলেই ভুল করি। অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন এবং তাদের ভুলগুলো ক্ষমা করার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, আল্লাহ ক্ষমাশীল এবং তিনি ক্ষমাশীলদের ভালোবাসেন। আপনার এই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আপনাকে গীবত ও পরনিন্দা থেকে দূরে রাখবে।
যারা গীবত ও পরনিন্দা করে, এমন সঙ্গ এড়িয়ে চলুন। এমন মানুষের সাথে মিশুন, যারা ভালো কথা বলে, জ্ঞান আলোচনা করে এবং গঠনমূলক কাজে আগ্রহী। ভালো সঙ্গ আপনাকেও ভালো পথে চলতে উৎসাহিত করবে।
অযথা পরচর্চায় সময় নষ্ট না করে নিজেকে উপকারী কাজে নিয়োজিত করুন। ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করুন, বই পড়ুন, নতুন কিছু শিখুন, সমাজের জন্য কাজ করুন। যখন আপনি গঠনমূলক কাজে ব্যস্ত থাকবেন, তখন অন্যের সমালোচনা করার জন্য আপনার কাছে সময় থাকবে না।
সর্বোপরি, আল্লাহর যিকির এবং স্মরণ বৃদ্ধি করুন। যখন আপনার অন্তর আল্লাহর প্রেমে পূর্ণ থাকবে, তখন তার সৃষ্টির প্রতিও আপনার ভালোবাসা বাড়বে। আল্লাহর স্মরণ আমাদের অন্তরকে পরিচ্ছন্ন রাখে এবং মন্দ কাজ থেকে দূরে রাখে।
গীবত, পরনিন্দা ও চোগলখুরী কেবল অপরের ক্ষতি করে না, বরং আমাদের নিজেদের আত্মাকেও ধ্বংস করে দেয়। এটি এমন এক নীরব আগুন যা আমাদের ইবাদত ও নেক আমলগুলোকে জ্বালিয়ে ছারখার করে দেয়। যদি, আমরা এই ক্ষতিকর অভ্যাসগুলো পরিহার করে নিজেদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করি। নিজেদের পরিবার, সমাজ এবং চারপাশের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই। নিজেদের চারিত্রিক গুণাবলীকে উন্নত করে একটি শান্তিময় ও কল্যাণকর সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি। আমাদের প্রতিটি কথা যেন হয় সত্য, সুন্দর ও অন্যের জন্য কল্যাণকর – এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
পয়েন্ট-৫
আমাদের সমাজের প্রতিটি সেক্টরেই এই 'লবণ দিয়ে শসা খাওয়া'র প্রবণতা ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক অবক্ষয়গুলো একটা অপরটার সাথে জড়িত, আর এর ফলস্বরূপ একটি দুষ্টচক্র তৈরি হয়, যা আমাদের সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয় কি-না মিলিয়ে দেখুন!
শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড, কিন্তু সেই মেরুদণ্ডেই আজ ঘুণ ধরেছে। যারা অর্থের লোভে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে নিষ্পাপ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে, তারা আসলে লবণ দিয়ে শসা খায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি থেকে শুরু করে শিক্ষক নিয়োগ, এমনকি পরীক্ষার ফলাফলে যে দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতি চলে, সেগুলোও এই অবক্ষয়েরই নামান্তর। যখন সার্টিফিকেট পাওয়াটাই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায় আর নৈতিকতা শেখানো হয় না, তখন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পথ হারায়।
যে বিচার ব্যবস্থা সমাজের ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে, সেখানেও যখন অন্যায় ঢুকে পড়ে, তখন পুরো সমাজ পচে যায়। টাকার জোরে বা ক্ষমতার প্রভাবে যখন একজন নিরপরাধী শাস্তি পায় আর প্রকৃত অপরাধী বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়, তখন এই বিচার ব্যবস্থাও লবণ দিয়ে শসা খায়। অর্থের লোভে বছরের পর বছর মামলা ঝুলিয়ে রাখা বা আইনের অপব্যবহার করে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা, সমাজের প্রতি অবিচার ছাড়া আর কিছু নয়।
রাজনীতি হলো সমাজের চালিকাশক্তি। কিন্তু যখন কিছু রাজনীতিবিদ জনগণের ম্যান্ডেট চুরি করে, ভোট কারচুপি বা জোর করে ক্ষমতা দখল করে, তখন তারা লবণ দিয়ে শসা খায়। জনগণকে মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া, প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করা, বা ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জনগণের অধিকার হরণ করা – এ সবই হলো রাজনীতির নামে সমাজের সাথে প্রতারণা।
চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু এই খাতে যখন ভেজাল ঔষধ তৈরি হয়, খাদ্যে বিষ মেশানো হয়, আর মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়, তখন তা এক ভয়াবহ 'লবণ দিয়ে শসা খাওয়া'। অর্থের অভাবে সঠিক চিকিৎসা না পাওয়া, অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা বা অপারেশনের নামে রোগীর পকেট কাটা, এগুলো রোগীদের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়। স্বাস্থ্যসেবাকে যখন শুধু ব্যবসা হিসেবে দেখা হয়, তখন মানবিকতা হারিয়ে যায়।
গণমাধ্যম হলো সমাজের দর্পণ। কিন্তু যখন এই দর্পণেই মিথ্যা আর হলুদ সাংবাদিকতার কালিমা লেগে যায়, গুজব ছড়িয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়, তখন তা লবণ দিয়ে শসা খাওয়ার শামিল। সুস্থ বিনোদনের বদলে যখন অশ্লীলতা আর উগ্রতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়, তখন আমাদের তরুণ প্রজন্ম বিপথে চলে যায়। মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে ভোক্তাদের ঠকানোও এই অবক্ষয়েরই অংশ।
পরিবার হলো সমাজের ভিত্তি। কিন্তু যখন এই ভিত্তিমূলই নড়বড়ে হয়ে যায়, গুরুজনদের অসম্মান করা হয়, পিতা-মাতার প্রতি অবহেলা করা হয়, তখন পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ে। অন্যের বিপদে পাশে না দাঁড়িয়ে বরং সুযোগের সদ্ব্যবহার করা, হিংসা বা পরশ্রীকাতরতা দেখানো, এগুলোও সমাজের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আর নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংস আচরণ, ধর্ষণ বা যেকোনো ধরনের নির্যাতন হলো সমাজের সবচেয়ে জঘন্যতম লবণ দিয়ে শসা খাওয়া, যা আমাদের মানবিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
লোভের বশবর্তী হয়ে যখন মানুষ নির্বিচারে বন উজাড় করে, নদী দূষিত করে, বা প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাট করে, তখন তারা লবণ দিয়ে শসা খায়। এর ফলস্বরূপ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়, বন্যা-খরা-ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ে, আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা বাসযোগ্য পৃথিবী তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়ে। পাহাড় কাটা, বালু উত্তোলন, বা জলাশয় ভরাট করে আবাসন তৈরি, সবই এই ধ্বংসের অংশ।
ধর্ম, বর্ণ, জাতি বা রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে যখন সমাজে বিভেদ তৈরি করা হয়, ঘৃণা আর অসহিষ্ণুতা ছড়ানো হয়, তখন সমাজ লবণ দিয়ে শসা খায়। গুজব ছড়ানো, ফেক নিউজ দিয়ে অস্থিরতা তৈরি করা, বা ভিন্ন মতাবলম্বীদের উপর আক্রমণ করা, এসবই আমাদের সামাজিক সংহতিকে ভেঙে দেয়।
আমাদের যুব সমাজ যখন মাদকের করাল গ্রাসে পতিত হয়, বা মাদক ব্যবসা সমাজে বিস্তার লাভ করে, তখন এটি এক ভয়াবহ লবণ দিয়ে শসা খাওয়া। মাদক শুধু ব্যক্তিকেই ধ্বংস করে না, এটি পরিবার এবং সমাজকেও ভেঙে দেয়। হতাশা, বেকারত্ব আর মূল্যবোধের অভাবে অনেক সময় যুবকরা এই অন্ধকার পথে পা বাড়ায়।
বর্তমান সময়ে সাইবার অপরাধ, যেমন: ফিশিং, হ্যাকিং, অনলাইন জুয়া, বা ডিজিটাল প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ঠকানো, হলো আধুনিক যুগের লবণ দিয়ে শসা খাওয়া। ইন্টারনেটের অপব্যবহার করে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করা বা আর্থিক জালিয়াতি করা, সমাজের বিশ্বাস আর নিরাপত্তার ভিত্তিকে নাড়িয়ে দেয়।
যখন মালিকপক্ষ শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি না দিয়ে, বা কাজের পরিবেশ নিরাপদ না করে তাদের শোষণ করে, তখন তারা লবণ দিয়ে শসা খায়। শ্রমিকদের অধিকার বঞ্চিত করা, শিশুশ্রম ব্যবহার করা, বা কারখানায় অনিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখা, এগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং সামাজিক অবক্ষয়ের সুস্পষ্ট উদাহরণ।
সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার বদলে যখন অপসংস্কৃতি, অশ্লীলতা বা বিজাতীয় সংস্কৃতির নামে আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য ও মূল্যবোধকে হেয় করা হয়, তখন তা এক প্রকার লবণ দিয়ে শসা খাওয়া। বিদেশি সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ বা নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্যকে অবজ্ঞা করা, দীর্ঘমেয়াদে আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়কে বিলীন করে দিতে পারে।
আজ আমরা "লবণ দিয়ে শসা খেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ে!" এই শিরোনামের আড়ালে দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা করলাম, একদিকে যেমন শসায় অতিরিক্ত লবণ ব্যবহারের স্বাস্থ্যগত কুফল, অন্যদিকে তেমনি সমাজের গভীরে লুকিয়ে থাকা নানা অবক্ষয়। আমরা দেখলাম, কিভাবে এক সাধারণ খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, আর ঠিক তেমনিভাবে লোভ, স্বার্থপরতা আর নীতিহীনতার চর্চা কিভাবে একটি সুস্থ সমাজের ভিত্তি নষ্ট করে দেয়।
পরকীয়া, গুপ্তচরবৃত্তি, গীবত বা পরনিন্দার মতো বিষয়গুলো কেবল ব্যক্তিগত ত্রুটি নয়, বরং এগুলো একটি অসুস্থ সমাজের প্রতিচ্ছবি। এই ধরনের কার্যকলাপগুলো ব্যক্তিগত শান্তি, পারিবারিক বন্ধন এবং সামাজিক সংহতিকে তিল তিল করে ধ্বংস করে। অবিশ্বাস আর হতাশার এই দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসাটা জরুরি।
আসুন, আমরা নিজেরা সচেতন হই এবং অন্যকেও সচেতন করি। ঠিক যেমন শসার প্রাকৃতিক গুণাগুণ উপভোগ করার জন্য লবণ পরিহার করি, তেমনি একটি সুস্থ ও সুন্দর সমাজ গড়ার জন্য আমরা নৈতিকতা, সততা আর পারস্পরিক বিশ্বাসকে মূল্য দেই।
এই "লবণ দিয়ে শসা খাওয়া"র প্রবণতা থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হতে হবে। শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না, আমাদের নিজেদেরও দায়িত্ব নিতে হবে। যদি, আমরা সম্মিলিতভাবে এই অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই, নৈতিকতা আর সততার পথে চলি। তাহলে, একটা সুস্থ ও সুন্দর সমাজ আমরাই গড়তে পারি।
মনে রাখবেন, প্রতিটি মানুষের ছোট ছোট ভালো কাজই পারে একটি বৃহৎ পরিবর্তন আনতে। একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ আমাদের অপেক্ষায় আছে, যদি আমরা আজই সঠিক পথে হাঁটা শুরু করি।
আপনার একটি সৎ সিদ্ধান্তই পারে আপনার জীবন এবং সমাজকে নতুন দিশা দেখাতে। আমরা কি সেই পরিবর্তনের অংশ হতে প্রস্তুত?
লেখক: এম এস হাবিবুর রহমান, সম্পাদক ও প্রকাশক, নিউজ সমাহার।
0 মন্তব্যসমূহ