Header Ads Widget


গল্পের প্রস্তাব দেবার বা ‘পিচ’ করার পদ্ধতি

পিচ-এর লক্ষ্য হচ্ছে আপনার আইডিয়া কেন ভাল, সেটা তুলে ধরা। কোন একটি স্টোরি কীভাবে পরিবেশন করলে ভাল হবে, বা একটি গল্পকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে, সেগুলোর ব্যাখ্যা ঠিকভাবে তুলে না ধরতে পারলে আপনার প্রস্তাব গৃহীত হবার সম্ভাবনা খুবই কম।
এই গাইড তৈরি করা হয়েছে বিবিসি সাংবাদিক এবং টুডে অনুষ্ঠানের প্রাক্তন সম্পাদক কেভিন মার্শ-এর ধারাবাহিক লেকচার এবং কর্মশালার ভিত্তিতে ।
“আপনার প্রস্তাব দেবেন আত্মবিশ্বাসের সাথে, তবে বিস্তারিত বর্ণনা না করে,” বলছেন মার্শ।
সাংবাদিকতার প্রতিটি সফল উদাহরণের শুরু হয় ভাল একটি প্রস্তাব বা পিচ দিয়ে। আপনি যদি বেশির ভাগ সময় একা কাজও করেন, কোন না কোন সময় আপনাকে আপনার আইডিয়াটা পিচ করতে হবে।
কিন্তু অনেক দারুণ আইডিয়া প্রস্তাব দেবার পর্যায়েই ব্যর্থ হয়। একটি ভাল পিচ-এর দুটি পর্যায় আছে। একটি হচ্ছে যে বৈঠক বা আলোচনায় আপনার প্রস্তাব পেশ করছেন, আর আপনার পিচ-এর গুণগত মান।
আপনি যদি কোন অনুষ্ঠান সম্পাদক না হন, তাহলে প্রথম পর্যায়ের ওপর আপনার খুব সীমিত নিয়ন্ত্রণ থাকবে। তবে আপনি যদি মনে করেন, যারা প্রস্তাব পিচ করছে তাদের প্রতি মিটিং-এর পরিচালকরা যথেষ্ট বন্ধুসুলভ না, তাহলে সেটা আপনার সম্পাদককে জানাতে হবে। এবং তাকে জানাতে হবে আপনি কেন সেটা মনে করছেন।
আপনি আপনার পিচ-এর গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। মনে রাখবেন, পিচ-এর লক্ষ্য হচ্ছে আপনার আইডিয়া কেন ভাল, সেটা তুলে ধরা। কোন একটি স্টোরি কীভাবে পরিবেশন করলে ভাল হবে, বা একটি গল্পকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে, সেগুলো তুলে ধরাই পিচ-এর লক্ষ্য।
কাজেই, আপনার প্রস্তাব পিচ করার আগে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, আপনার কাছে আইডিয়াটা কেন ভাল লেগেছিল। আপনার পিচ-এ যদি সেই ব্যাখ্যা না থাকে, তাহলে আপনার প্রস্তাব গৃহীত হবার সম্ভাবনা খুবই কম।
বিবিসি রেডিওর প্রাক্তন একজন সম্পাদক পিটার রিপন যেমন বলছেন, “আপনি যখন কোন আইডিয়া পিচ করছেন, তখন শুধুমাত্র একটি স্টোরি বা গল্পের প্রস্তাব দেবেন না – নিজের মনে পরিষ্কার থাকুন আপনি গল্পটি নিয়ে কী বলতে চান”।
রেডিও ফোর-এর একজন প্রযোজক সারিন বেইনস কথাটি আরো পরিষ্কার করে বললেন, “আপনি যেসব কথাকে সঠিক তথ্য বলে মনে করছেন, সেগুলো যেন তেন ভাবে উপস্থাপন করলে আপনার পিচ-এর গ্রহণযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আপনি যদি খুঁটিনাটি বিষয়ে নিশ্চিত না হন -  কিন্তু মনে করেন যে একটি ভাল আইডিয়ার সম্ভাবনা আছে – তাহলে ব্যাপারটা খোলাসা করুন”।
তবে এসব কিছু নির্ভর করে এমন মিটিং বা আলোচনার ওপর  যেখানে সবাই সৃজনশীল হতে চায়। সেখানে সবারই একটি ভূমিকা আছে।
একটি আলোচনাকে সত্যিকার অর্থে সৃজনশীল হতে হলে মিটিং শুরু হতে হবে সম্পূর্ণ খোলা মন নিয়ে। এবং এটা একটি সহযোগিতামূলক প্রক্রিয়া। বেশির ভাগ সৃজনশীল এবং অরিজিনাল সাংবাদিকতা আসে একের পর এক পিচ থেকে, যার ওপর আলোচনা হয় ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে।
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের এ্যালাস্টায়ার এলফিকের মতে, সৃজনশীলতা আসে অন্যদের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে। সবাইকে সুযোগ দিতে হবে যাতে তারা আইডিয়া নিয়ে ভাবতে পারে এবং গতানুগতিকভাবে স্টোরি পরিবেশনার বাইরে চিন্তা করতে পারে। গল্প এবং তার পরিবেশনা বা ট্রিটমেন্ট নিয়ে সবাই যাতে নিজেদের ধ্যান-ধারণা চ্যালেঞ্জ করতে পারে, সেদিকে তাদের নিয়ে যেতে হবে।
মিটিং-এ লোকজনকে উৎসুক হয়ে স্টোরির বিভিন্ন দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মজা উপভোগ করার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। স্টোরির সম্পাদকীয় এবং প্রযোজনার দিক নিয়ে লোকজনের প্রশ্ন শুনতে হবে, যাতে প্রস্তাবকারীরা সমাধান তুলে ধরতে পারেন।
কয়েকজন সম্পাদকের মতামতের সারমর্ম এভাবে তুলে ধরা যায়:
“শুরুর দিকে কোন আইডিয়াই বাজে আইডিয়া নয় ... যত ভিন্নধর্মী চিন্তা সম্ভব, নিয়ে আসুন ... আপনার স্টোরির রূপরেখা আপনার মাথায় পরিষ্কার হবার পর রদ-বদলের সুযোগ থাকবে..”
“মিটিং-এ অন্যান্যদের কথা শোনা এবং তাদের আইডিয়া এগিয়ে নিতে সহায়তা করাটাও আপনার ভূমিকা।  আলোচনা থামিয়ে দেবেন না। ‘হ্যাঁ, কিন্তু’ বলে থামিয়ে না দিয়ে, ‘হ্যাঁ, এবং’ বলে এগিয়ে নিয়ে যান”।
“মিটিং-এ আপনার সহকর্মীদের সাথে সহযোগিতা করুন। অন্যদের প্রস্তাবকে ইতিবাচক ভাবে দেখুন। কোন আইডিয়া সহজে ছেড়ে দেবেন না”।
“সাধারণত, ছোট গ্রুপে আপনি বেশি সৃজনশীল হতে পারবেন। প্রতিটি ভাবনা অন্যদের মধ্যে ভিন্ন আইডিয়া জাগিয়ে তুলবে”।
ব্যাপারটা বুঝতেই পারছেন।
তবে আবার বলবো, এসব কিছু আপনা-আপনি হয় না। এখানে সময়ের প্রয়োজন। এখানে এমন মানসিকতার প্রয়োজন যা নিশ্চিত করবে যে, অন্তত মিটিং-এর একটি অংশ ওপরে বর্ণিত আলাপচারিতার মত হবে।
গুরুগম্ভীর মিটিং-এ তরুণ প্রযোজকরা যে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে থাকেন, তা ধরতে পেরেছেন সারিন:
“আপনি যদি বসে বসে শুধু আপনার নিজস্ব পিচ-এর কথাই ভাবতে থাকেন, তাহলে আপনি আলোচনায় যোগ দেবার সুযোগ হাতছাড়া করবেন। যে বিষয় নিয়ে আপনি পুরোপুরি ওয়াকিবহাল নন, সে বিষয় নিয়ে যখন আলোচনা করা হচ্ছে তখন অন্যমনস্ক হয়ে পড়বেন না”।
“হয়তো আপনি ওই স্টোরিটা সম্পর্কে ভিন্ন বিশ্লেষণ দিতে পারবেন। যারা মনে করেন তারা স্টোরির সব কিছু জানেন, তারা হয়তো আলোচনার যেসব দিক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে, সেগুলো নিয়ে ভাবছেন না”।
“এটাও সত্য যে, সব চেয়ে ভাল সিকুয়েন্সগুলো আসে কোন অরিজিনাল আইডিয়া থেকে, যেটা বিভিন্ন আলোচনার মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণতা পেয়েছে”।
সোজা কথায়: শুধু আপনার নিজস্ব পিচই মূল কথা নয়; অন্যান্য লোকের আইডিয়া নিয়ে আলোচনায় আপনার অংশগ্রহণ সাফল্যের চাবিকাঠি হতে পারে।
বিবিসির বেলফাস্ট টিম থেকে শেষ একটি উপদেশ, বিশেষ করে কঠিন মিটিং-এ স্টোরি পিচ করা  যদি একটি চ্যালেঞ্জ মনে হয়:
“প্রায় সময়, এমন একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তির প্রয়োজন আছে যার কাছে আপনার স্টোরি আইডিয়াটা নিয়ে যেতে পারেন। আপনার স্টোরি দেখে মন্তব্য করার জন্য আপনার সহকর্মীদের মাঝে এমন একজন ব্যক্তি খুঁজে নিন যিনি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দিতে দ্বিধা বোধ করবেন না। নিজেকে, এবং একে অপরকে পরীক্ষা করার জন্য সব সময় আলাপ করার মত স্টোরি আইডিয়া মাথায় রাখবেন”।
অর্থাৎ: “অভিজ্ঞ সহকর্মীর সাথে আপনার আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করার জন্য কখনোই ভয় পাবেন না। অভিজ্ঞ সহকর্মী তাদের আইডিয়া নিয়ে ব্যঙ্গ করতে পারেন, এই ভয়েই অনেক তরুণ সাংবাদিক এগিয়ে আসেন না”।
-bbc

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ