আল্লাহর প্রেরিত প্রত্যেক নবী রাসূলের জীবনীতেই আমাদের জন্য মূল্যবান শিক্ষা রয়েছে। মানব জাতির পিতা ও আল্লাহর প্রথম রাসূল হযরত আদম (আ.) এর জীবনেও আমাদের জন্য মূল্যবান শিক্ষা রয়েছে।
নিম্নে হযরত আদম (আ.) এর জীবনী থেকে সংক্ষেপে পাঁচটি শিক্ষা আলোচনা করা হল।
১. শয়তান: আমাদের নিকৃষ্টতম শত্রু
হযরত আদম (আ.) যখন তার স্ত্রী হযরত হাওয়া (আ.) সহ জান্নাতে অবস্থান করছিলেন, আল্লাহ তখন তাদেরকে জান্নাতের সকল নিয়ামত ভোগ করার অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট গাছের কাছে তাদেরকে যেতে তিনি নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু শয়তান প্রতিনিয়ত তাদেরকে সেই গাছের ফল খাওয়ার জন্য উস্কানী দিচ্ছিল। এখানে লক্ষনীয় যে, শয়তান তাদেরকে সরাসরি আল্লাহর নির্দেশ লঙ্ঘন করতে বলেনি বরং তাদেরকে লোভ দেখিয়েছিলো, এই গাছের ফল তাদেরকে চিরন্তন জীবন ও জ্ঞান প্রদান করবে। ফলে তারা আল্লাহর নির্দেশের কথা ভুলে সেই গাছের ফল খেলেন। এর ফলে আল্লাহ তাদেরকে জান্নাত থেকে বের করে দিলেন এবং শয়তান তার লক্ষ্য পূরণ করতে সফল হল।
২. আন্তরিকতা
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কাজের জন্য আন্তরিকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাবিল ও কাবিলের কাহিনী থেকে আমরা এই আন্তরিকতা সম্পর্কেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি।
হাবিল ও কাবিল উভয়েই আল্লাহর কাছে কুরবানী করার জন্য আদিষ্ট হয়েছিল। হাবিল ভেড়া পালন করতো এবং কাবিল গম চাষ করতো। হাবিল আন্তরিকতার সাথে তার পালের মধ্যে উত্তম ভেড়া কুরবানীর জন্য নিয়ে গিয়েছিল। অন্যদিকে কাবিল দায়সারা ভাবে তার গমের কিছু নিকৃষ্ট আটি কুরবানীর জন্য রেখে এসেছিল। আন্তরিকতার কারণে আল্লাহ হাবিলের কুরবানী কবুল করেন এবং কাবিলের কুরবানী তার আন্তরিকতার অভাবের কারণে প্রত্যাখ্যান করেন।
৩. তওবা
হযরত আদম (আ.) ও হযরত হাওয়া (আ.) যখন জান্নাত থেকে বহিস্কৃত হয়ে পৃথিবীতে আসেন, তারা অবিলম্বে নিজেদের ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান এবং আল্লাহর ক্ষমার জন্য দোয়া করতে থাকেন। তাদের দোয়া আল্লাহ কবুল করে তাদেরকে ক্ষমা করেন। এর থেকে তওবার গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি।
৪. অহংকারের ক্ষতি
আল্লাহ যখন প্রথম আদম (আ.) কে তৈরি করেন, তিনি তখন উপস্থিত সকলকে আদম (আ.) কে সিজদা করার জন্য আদেশ করেন। সকলে সেই নির্দেশ পালন করলেও শয়তান আল্লাহর আদেশ পালন করতে অস্বীকার করে। সে জানায়, সে আগুনের তৈরি এবং আদম মাটির তৈরি। সুতরাং, সে আদম (আ.) থেকে উত্তম।
তার এই অহংকারের জন্য আল্লাহ শয়তানকে তার জান্নাতে অবস্থানের মর্যাদা কেড়ে নিয়ে তাকে জান্নাত থেকে বের হয়ে যাওয়ার আদেশ দান করেন। সুতরাং, অহংকারের ক্ষতিকারকতা সম্পর্কে আমরা এই ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি।
৫. আল্লাহর উপর বিশ্বাস
আল্লাহ যখন হযরত আদম (আ.) ও হযরত হাওয়া (আ.) কে জান্নাত থেকে নির্বাসন দিয়ে পৃথিবীতে পাঠান, সাধারণ মানুষের মতে তা যথার্থই দুর্ভাগ্যের কারণ হয়েছিল। পৃথিবী তার সকল সৌন্দর্য সত্ত্বেও জান্নাতের সাথে কোনোক্রমেই তুলনীয় নয়।
কিন্তু আদম (আ.) আল্লাহর উপর ভরসা করে এই পৃথিবীতে বসবাস শুরু করেন। তারমত আমরাও আল্লাহর উপর ভরসা ও বিশ্বাস স্থাপন করে আমাদের জীবনকে অতিবাহিত করতে পারি। কেননা, আমাদের জীবন সম্পর্কে আমাদের চেয়ে আল্লাহর উত্তম পরিকল্পনা রয়েছে।
সূত্র: অনলাইন থেকে নেওয়া
0 মন্তব্যসমূহ