আমরা কথায় বলে থাকি বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। আর সেজন্যই কৃষি উন্নয়ন মানেই দেশের উন্নয়ন। সরকারি-বেসরকারিভাবে কৃষিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ক্রমান¦য়ে কৃষি বদলে দিচ্ছে দেশ, বদলে যাচ্ছে উপকূল। কৃষিক্ষেত্রে বেশিরভাগ ভূমিকাই রাখছে উপকূল। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষও কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এ অঞ্চলেই বেশি লবণাক্ততা থাকার কারণে কৃষিও হুমকির মুখে পড়েন।
উপকূলীয় জনজীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপকূলের মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। নানা বিপত্তি এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের নাজেহাল করছে, যার মধ্যে রয়েছে লবণাক্ততা। লবণাক্ততা কখনও উপকূলীয় বাসিন্দাদের কাছে পৌষ মাস আবার কখনও সর্বনাশ হয়ে থাকে। সমুদ্র উপকূলে কৃষি কাজেও রয়েছে নানাবিধ বাধা যার মধ্যে লবণাক্ততা অন্যতম। শুকনো মৌসুমে অর্থাৎ নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত উপকূলীয় অঞ্চলের মাটিতে লবণাক্ততা দেখা দেয়। এসময় সেচের জন্য প্রয়োজনীয় মিষ্টি পানিও থাকে না, নদী এবং যেসব খালে পানি থাকে তাও প্রায় লবণাক্ত হয়ে যায়। পুকুর এবং বিল শুকিয়ে যায় খুব দ্রুত যেগুলোতে বৃষ্টির পানি জমে থাকত। এমনকি নলকূপের পানির স্তরও অনেক নিচে নেমে যায়, ফলে মিষ্টি পানি খুব দুষ্কর হয়ে যায়। আর এর ফলশ্রুতিতে কৃষি কাজ তথা সবজি চাষ হয়ে যায় প্রায় অসম্ভব, ফলে বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদি থাকে শুকনো মৌসুমজুড়ে। কৃষিতে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষক বা কৃষি অনেক অবদান রাখছে। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মোট ১৪ জেলা উপকূলের আওতায়। মোট কৃষি জমির ৩০ শতাংশ রয়েছে উপকূলীয় অঞ্চলে, যার প্রায় ৫৩ শতাংশ লবণাক্ততায় আক্রান্ত এবং লবণাক্ততা প্রতি বছর বেড়েই চলেছে। এ কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের কৃষক তাদের জমি অনাবাদি রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে জাতীয় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। উৎপাদন এবং আয় কমে যাওয়ায় প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবে ভুগছে প্রতিটি কৃষক পরিবার। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের এ সমস্যা সমাধানে সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইকো কোঅপারেশন দি সল্ট সলিউশন নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হচ্ছে উপকূলীয় অঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের লবণসহিষ্ণু ফসলের সঙ্গে পরিচয় ঘটানো, প্রযুক্তিগত জ্ঞান বৃদ্ধি করা এবং গুণগত মানসম্পন্ন ফসল উৎপাদনে কারিগরি সহায়তা প্রদান করা, যার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির মান উন্নত হবে।
আমরা জানি, বিশ্বে খাদ্যশস্যের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগোচ্ছে বাংলাদেশ। খাদ্যশস্যে প্রতি হেক্টরে ১০ দশমিক ৩৪ টন উৎপাদন করে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম, যা নিঃসন্দেহে বিশাল অর্জন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃষিক্ষেত্রে সময়োপযোগী পদক্ষেপ এবং দিকনির্দেশনায় খরপোষের কৃষি আজ বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হয়েছে। খাদ্যশস্য উৎপাদন, টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কর্মসংসস্থান ও রপ্তানি বাণিজ্যে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষিজমি কমতে থাকাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। ধান, গম ও ভুট্টা বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। সবজি উৎপাদনে তৃতীয় আর মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে।
দেশের মোট দেশজ উৎপাদন তথা জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। বর্তমান সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে কৃষি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করে কৃষির উন্নয়ন ও কৃষকের কল্যাণকে সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের স্থান দশম।
উল্লেখ্য আগেই বলেছি, দক্ষিণাঞ্চল তথা উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততার কারণে কৃষকের সর্বনাশ হয়ে থাকে। এ লবণসহিষ্ণু জাত নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও বরগুনাÑ এ চারটি জেলার আটটি উপজেলার ৫ হাজার চাষি পরিবার নিয়ে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের দোরগোড়ায় গিয়ে বাস্তবায়ন করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোডেক এবং কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সল্ট ফার্ম টেক্সেল। প্রকল্পটি তিন বছর ধরে এই অঞ্চলে শুকনো অর্থাৎ শীত মৌসুমে লবণাক্ত জমিতে গাজর, রেডবিট (বিটকপি), আলু, ফুলকপি, ওলকপি এবং বাঁধাকপি উৎপাদনে উন্নত প্রযুক্তিগুলোর প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করছে।
প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা মতে, মোট ২০০ প্রদর্শনী প্লট এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষক শিখেছে লবণসহিষ্ণু কৃষির প্রযুক্তিগুলো, জানতে পেরেছে বিভিন্ন ফসলের লবণ সহ্যক্ষমতার মাত্রা। প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে বিতরণকৃত নতুন জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে বাঁধাকপির রাইমা জাতটি, যা ৮ ডিএস/মি পর্যন্ত লবণ সহ্য করতে পারে, আকারে বড় এবং অত্যন্ত সুস্বাদু হয়। ফুলকপির স্কাইওয়াকার জাতটি ১২ ডিএস/মি পর্যন্ত লবণ সহ্য করতে পারে; ফুল বড় ও উজ্জ্বল হয় এবং স্বাদ অনেক ভালো। ওলকপির লেক এবং করিস্ট জাত দুটি ৯ ডিএস/মি পর্যন্ত লবণ সহ্য করতে পারে; আকারে অনেক বড় হয়; কিন্তু শক্ত অর্থাৎ আঁশ হয় না, তুলনামূলক বেশি নরম এবং স্বাদ অত্যন্ত ভালো, ইচ্ছে করলে কাঁচাই চিবিয়ে খাওয়া যায়। আলুর মেট্রো জাতটি ১০ ডিএস/মি পর্যন্ত লবণ সহ্য করতে পারে; আকারে বড় ও অত্যন্ত সুস্বাদু হয় এবং ফলন স্থানীয়ভাবে চাষকৃত ডায়মন্ডের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এছাড়া প্রকল্পটি চাষিদের মাঝে রেড বিট নামে এক নতুন ফসলের বোরো নামক জাতটির উৎপাদন ও সম্প্রসারণের কাজ করছে, যা উচ্চমাত্রার লবণসহিষ্ণু প্রায় ২১ ডিএস/মি; যার পাতা এবং মূল টিউবার দুটিই খাওয়া যায়। এটি অনেক উন্নত পুষ্টিগুণসম্পন্ন ফসল। এটি কাঁচা অবস্থায় সালাদ হিসেবে অথবা রান্না করেও খাওয়া যায়। ১৪ জেলার মধ্যে মোট ৮টি উপজেলার প্রায় ১০০ একর অনাবাদি জমিতে এসব সবজি ফসলের লবণসহিষ্ণু জাতগুলোর আবাদ করা হয়েছে, যা স্থানীয় কৃষকদের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করছে। প্রকল্পের আওতায় মোট ৩০ প্রশিক্ষিত নার্সারারের (সবজি বীজ উৎপাদনকারী) মাধ্যমে গুণগত মানসম্পন্ন সবজি চারা উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে অন্যান্য কৃষক এসব উন্নতমানের সবজি ফসলের চারা সহজেই পেতে পারেন। এছাড়া দেশের স্বনামধন্য বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লালতীর সিড কোম্পানির মাধ্যমেও এসব বিদেশি জাতের বীজ সহজপ্রাপ্যতার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের সহায়তায় বাগেরহাটের রামপালে তৈরি করা হয়েছে গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র, যেখান থেকে খুব সহজেই যে কোনো জাতের লবণসহিষ্ণুতার মাত্রা নিরূপণ করা যাবে।
কৃষিবিদদের মতে, উপকূলীয় অঞ্চলে শুকনো মৌসুমে বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদি থাকে লবণাক্ততার কারণে। ফলে এ সময়ে কৃষক অবর্ণনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হন। ইকো কো-অপারেশনের অর্থায়নে কোডেক কর্তৃক বাস্তবায়িত দি সল্ট সলিউশন প্রকল্পটি কৃষকদের এ সমস্যা সমাধানে সফলতার সঙ্গে কাজ করছে। এ প্রকল্পের প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী এবং আরও বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে ওই এলাকার চাষি লবণসহিষ্ণু কৃষিতে দক্ষ হচ্ছেন। তারা এখন খুব সহজেই তাদের জমির লবণের মাত্রা নির্ণয় করতে পারেন এবং সে অনুযায়ী ফসল ও জাত নির্বাচন করে চাষাবাদ করতে পারছেন। প্রকল্পের প্রযুক্তিগুলো সমগ্র উপকূলীয় এলাকার কৃষকের মধ্যে সম্প্রসারণ করা গেলে তা লবণাক্ততার সমস্যা সমাধান করে বিপুল পরিমাণ অনাবাদি জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনতে সক্ষম হবে। ফলে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জন সহজ হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে জানা যায়, বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কর্তৃক গৃহীত কৃষি প্রণোদনা/পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত ৯৬০ কোটি ৩৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ৮৬ লাখ ৪০ হাজার ৪৪ জন কৃষক উপকৃত হয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৩৩ কোটি ১৫ লাখ ৬২ হাজার টাকা কৃষি উপকরণ ও আর্থিক সহায়তা হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। ফসলের উন্নত ও প্রতিকূলতা সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনে অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। ২০১৮-১৯ সালে অবমুক্তকৃত উদ্ভাবিত জাত ১২টি, উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ৯৫টি এবং নিবন্ধিত জাত ২৬টি। গম ও ভুট্টার গবেষণা সম্প্রসারণের জন্য সরকার ২০১৮ সালে গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছে। গমের একটি জাত উদ্ভাবন, গম ও ভুট্টার ৪ হাজার ৫ শটি জার্মপ্লাজম সংগ্রহ এবং রোগবালাই ব্যবস্থাপনার ওপর একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এতকিছুর পরও উপকূলে আশানুরূপ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না।
সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ১৯৯৯, ২০১৩ এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালে জাতীয় কৃষিনীতি প্রণয়ন করেছে। জাতীয় কৃষি সম্প্রসারণ নীতি ২০১৯ চূড়ান্তকরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া ক্ষুদ্রসেচ নীতিমালা, জৈব কৃষিনীতি প্রণয়নসহ কৃষি উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যকরী ও সময়োপযোগী আইন প্রণয়ন করেছে। কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নীতিমালা ২০১৯ প্রণীত হয়েছে, যার মাধ্যমে কৃষিতে অবদানের জন্য ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতিদানের বিষয়টি সংহত/সম্প্রসারিত হবে। বর্তমান সরকার নির্বাচনি ইশতেহার ২০১৮, এসডিজি ২০৩০, রূপকল্প ২০২১ এবং রূপকল্প ২০৪১-এর আলোকে জাতীয় কৃষিনীতি, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট, ডেল্টাপ্ল্যান : ২১০০ এবং অন্যান্য পরিকল্পনা দলিলের আলোকে সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলেই কৃষিসহ সব ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবরূপ পাবে।
আমরা জানি কয়েক বছর ধরে কৃষি থেকে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততার কারণে ফসল না হওয়ায়। তবে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে উন্নত জাত ও লবণসহিষ্ণু জাত এবং কারগরি পরামর্শে আবারও কৃষির দিকে ঝুঁকছেন চাষি। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে আমি আশা করছি। যেহেতু উপকূলীয় অঞ্চল কৃষিতে ব্যাপক অবদান রাখছে সে কারণে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায় উপকূলকে গুরুত্ব দিতে হবে বেশি। কৃষি ক্ষেত্রে উপকূলকে বেশি গুরুত্ব দিলে এবং এ ধারা অব্যাহত থাকলে যেমন অনাবাদি জমি আবাদি হবে, লবণসহিষ্ণু জাতের কারণে লবণাক্ত জমিতে চাষাবাদ হবে, তেমনি কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হবেন, লাভবান হবে দেশ এবং দেশ শস্য সংকটে পড়বে না। উল্লেখ্য পুরোনো আমলের চাষাবাদ প্রণালি পরিবর্তন করে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত চাষাবাদে মনোযোগী হতে হবে। আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা সম্পর্কে কৃষকদের কৃষি বিশেষজ্ঞ ও কৃষি কর্মকর্তাদের সক্রিয় সহযোগিতা এবং বেশি বেশি প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
পরিশেষে বলতে চাই, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজন চলছে সারা দেশে। কৃষিকে লাভজনক খাতে রূপান্তরের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে স্থায়ী ভিত্তি দিতে হলে, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হোক না একটি আন্দোলন? বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে হোক না কৃষির আন্দোলন? হোক একটি অঙ্গীকার, কৃষিতে বদলাবে বাংলাদেশ, কৃষিতে বদলে যাক উপকূল। এটাই হোক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অঙ্গীকার।
শফিকুল ইসলাম খোকন
সাংবাদিক, কলামিস্ট ও স্থানীয় সরকার বিষয়ে গবেষক
msi.khokonp@gmail.com
উপকূলীয় জনজীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপকূলের মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। নানা বিপত্তি এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের নাজেহাল করছে, যার মধ্যে রয়েছে লবণাক্ততা। লবণাক্ততা কখনও উপকূলীয় বাসিন্দাদের কাছে পৌষ মাস আবার কখনও সর্বনাশ হয়ে থাকে। সমুদ্র উপকূলে কৃষি কাজেও রয়েছে নানাবিধ বাধা যার মধ্যে লবণাক্ততা অন্যতম। শুকনো মৌসুমে অর্থাৎ নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত উপকূলীয় অঞ্চলের মাটিতে লবণাক্ততা দেখা দেয়। এসময় সেচের জন্য প্রয়োজনীয় মিষ্টি পানিও থাকে না, নদী এবং যেসব খালে পানি থাকে তাও প্রায় লবণাক্ত হয়ে যায়। পুকুর এবং বিল শুকিয়ে যায় খুব দ্রুত যেগুলোতে বৃষ্টির পানি জমে থাকত। এমনকি নলকূপের পানির স্তরও অনেক নিচে নেমে যায়, ফলে মিষ্টি পানি খুব দুষ্কর হয়ে যায়। আর এর ফলশ্রুতিতে কৃষি কাজ তথা সবজি চাষ হয়ে যায় প্রায় অসম্ভব, ফলে বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদি থাকে শুকনো মৌসুমজুড়ে। কৃষিতে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষক বা কৃষি অনেক অবদান রাখছে। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মোট ১৪ জেলা উপকূলের আওতায়। মোট কৃষি জমির ৩০ শতাংশ রয়েছে উপকূলীয় অঞ্চলে, যার প্রায় ৫৩ শতাংশ লবণাক্ততায় আক্রান্ত এবং লবণাক্ততা প্রতি বছর বেড়েই চলেছে। এ কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের কৃষক তাদের জমি অনাবাদি রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে জাতীয় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। উৎপাদন এবং আয় কমে যাওয়ায় প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবে ভুগছে প্রতিটি কৃষক পরিবার। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের এ সমস্যা সমাধানে সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইকো কোঅপারেশন দি সল্ট সলিউশন নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হচ্ছে উপকূলীয় অঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের লবণসহিষ্ণু ফসলের সঙ্গে পরিচয় ঘটানো, প্রযুক্তিগত জ্ঞান বৃদ্ধি করা এবং গুণগত মানসম্পন্ন ফসল উৎপাদনে কারিগরি সহায়তা প্রদান করা, যার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির মান উন্নত হবে।
আমরা জানি, বিশ্বে খাদ্যশস্যের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগোচ্ছে বাংলাদেশ। খাদ্যশস্যে প্রতি হেক্টরে ১০ দশমিক ৩৪ টন উৎপাদন করে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম, যা নিঃসন্দেহে বিশাল অর্জন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃষিক্ষেত্রে সময়োপযোগী পদক্ষেপ এবং দিকনির্দেশনায় খরপোষের কৃষি আজ বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হয়েছে। খাদ্যশস্য উৎপাদন, টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কর্মসংসস্থান ও রপ্তানি বাণিজ্যে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষিজমি কমতে থাকাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। ধান, গম ও ভুট্টা বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। সবজি উৎপাদনে তৃতীয় আর মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে।
দেশের মোট দেশজ উৎপাদন তথা জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। বর্তমান সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে কৃষি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করে কৃষির উন্নয়ন ও কৃষকের কল্যাণকে সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের স্থান দশম।
উল্লেখ্য আগেই বলেছি, দক্ষিণাঞ্চল তথা উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততার কারণে কৃষকের সর্বনাশ হয়ে থাকে। এ লবণসহিষ্ণু জাত নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও বরগুনাÑ এ চারটি জেলার আটটি উপজেলার ৫ হাজার চাষি পরিবার নিয়ে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের দোরগোড়ায় গিয়ে বাস্তবায়ন করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোডেক এবং কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সল্ট ফার্ম টেক্সেল। প্রকল্পটি তিন বছর ধরে এই অঞ্চলে শুকনো অর্থাৎ শীত মৌসুমে লবণাক্ত জমিতে গাজর, রেডবিট (বিটকপি), আলু, ফুলকপি, ওলকপি এবং বাঁধাকপি উৎপাদনে উন্নত প্রযুক্তিগুলোর প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করছে।
প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা মতে, মোট ২০০ প্রদর্শনী প্লট এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষক শিখেছে লবণসহিষ্ণু কৃষির প্রযুক্তিগুলো, জানতে পেরেছে বিভিন্ন ফসলের লবণ সহ্যক্ষমতার মাত্রা। প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে বিতরণকৃত নতুন জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে বাঁধাকপির রাইমা জাতটি, যা ৮ ডিএস/মি পর্যন্ত লবণ সহ্য করতে পারে, আকারে বড় এবং অত্যন্ত সুস্বাদু হয়। ফুলকপির স্কাইওয়াকার জাতটি ১২ ডিএস/মি পর্যন্ত লবণ সহ্য করতে পারে; ফুল বড় ও উজ্জ্বল হয় এবং স্বাদ অনেক ভালো। ওলকপির লেক এবং করিস্ট জাত দুটি ৯ ডিএস/মি পর্যন্ত লবণ সহ্য করতে পারে; আকারে অনেক বড় হয়; কিন্তু শক্ত অর্থাৎ আঁশ হয় না, তুলনামূলক বেশি নরম এবং স্বাদ অত্যন্ত ভালো, ইচ্ছে করলে কাঁচাই চিবিয়ে খাওয়া যায়। আলুর মেট্রো জাতটি ১০ ডিএস/মি পর্যন্ত লবণ সহ্য করতে পারে; আকারে বড় ও অত্যন্ত সুস্বাদু হয় এবং ফলন স্থানীয়ভাবে চাষকৃত ডায়মন্ডের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এছাড়া প্রকল্পটি চাষিদের মাঝে রেড বিট নামে এক নতুন ফসলের বোরো নামক জাতটির উৎপাদন ও সম্প্রসারণের কাজ করছে, যা উচ্চমাত্রার লবণসহিষ্ণু প্রায় ২১ ডিএস/মি; যার পাতা এবং মূল টিউবার দুটিই খাওয়া যায়। এটি অনেক উন্নত পুষ্টিগুণসম্পন্ন ফসল। এটি কাঁচা অবস্থায় সালাদ হিসেবে অথবা রান্না করেও খাওয়া যায়। ১৪ জেলার মধ্যে মোট ৮টি উপজেলার প্রায় ১০০ একর অনাবাদি জমিতে এসব সবজি ফসলের লবণসহিষ্ণু জাতগুলোর আবাদ করা হয়েছে, যা স্থানীয় কৃষকদের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করছে। প্রকল্পের আওতায় মোট ৩০ প্রশিক্ষিত নার্সারারের (সবজি বীজ উৎপাদনকারী) মাধ্যমে গুণগত মানসম্পন্ন সবজি চারা উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে অন্যান্য কৃষক এসব উন্নতমানের সবজি ফসলের চারা সহজেই পেতে পারেন। এছাড়া দেশের স্বনামধন্য বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লালতীর সিড কোম্পানির মাধ্যমেও এসব বিদেশি জাতের বীজ সহজপ্রাপ্যতার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের সহায়তায় বাগেরহাটের রামপালে তৈরি করা হয়েছে গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র, যেখান থেকে খুব সহজেই যে কোনো জাতের লবণসহিষ্ণুতার মাত্রা নিরূপণ করা যাবে।
কৃষিবিদদের মতে, উপকূলীয় অঞ্চলে শুকনো মৌসুমে বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদি থাকে লবণাক্ততার কারণে। ফলে এ সময়ে কৃষক অবর্ণনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হন। ইকো কো-অপারেশনের অর্থায়নে কোডেক কর্তৃক বাস্তবায়িত দি সল্ট সলিউশন প্রকল্পটি কৃষকদের এ সমস্যা সমাধানে সফলতার সঙ্গে কাজ করছে। এ প্রকল্পের প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী এবং আরও বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে ওই এলাকার চাষি লবণসহিষ্ণু কৃষিতে দক্ষ হচ্ছেন। তারা এখন খুব সহজেই তাদের জমির লবণের মাত্রা নির্ণয় করতে পারেন এবং সে অনুযায়ী ফসল ও জাত নির্বাচন করে চাষাবাদ করতে পারছেন। প্রকল্পের প্রযুক্তিগুলো সমগ্র উপকূলীয় এলাকার কৃষকের মধ্যে সম্প্রসারণ করা গেলে তা লবণাক্ততার সমস্যা সমাধান করে বিপুল পরিমাণ অনাবাদি জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনতে সক্ষম হবে। ফলে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জন সহজ হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে জানা যায়, বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কর্তৃক গৃহীত কৃষি প্রণোদনা/পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত ৯৬০ কোটি ৩৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ৮৬ লাখ ৪০ হাজার ৪৪ জন কৃষক উপকৃত হয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৩৩ কোটি ১৫ লাখ ৬২ হাজার টাকা কৃষি উপকরণ ও আর্থিক সহায়তা হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। ফসলের উন্নত ও প্রতিকূলতা সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনে অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। ২০১৮-১৯ সালে অবমুক্তকৃত উদ্ভাবিত জাত ১২টি, উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ৯৫টি এবং নিবন্ধিত জাত ২৬টি। গম ও ভুট্টার গবেষণা সম্প্রসারণের জন্য সরকার ২০১৮ সালে গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছে। গমের একটি জাত উদ্ভাবন, গম ও ভুট্টার ৪ হাজার ৫ শটি জার্মপ্লাজম সংগ্রহ এবং রোগবালাই ব্যবস্থাপনার ওপর একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এতকিছুর পরও উপকূলে আশানুরূপ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না।
সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ১৯৯৯, ২০১৩ এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালে জাতীয় কৃষিনীতি প্রণয়ন করেছে। জাতীয় কৃষি সম্প্রসারণ নীতি ২০১৯ চূড়ান্তকরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া ক্ষুদ্রসেচ নীতিমালা, জৈব কৃষিনীতি প্রণয়নসহ কৃষি উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যকরী ও সময়োপযোগী আইন প্রণয়ন করেছে। কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নীতিমালা ২০১৯ প্রণীত হয়েছে, যার মাধ্যমে কৃষিতে অবদানের জন্য ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতিদানের বিষয়টি সংহত/সম্প্রসারিত হবে। বর্তমান সরকার নির্বাচনি ইশতেহার ২০১৮, এসডিজি ২০৩০, রূপকল্প ২০২১ এবং রূপকল্প ২০৪১-এর আলোকে জাতীয় কৃষিনীতি, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট, ডেল্টাপ্ল্যান : ২১০০ এবং অন্যান্য পরিকল্পনা দলিলের আলোকে সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলেই কৃষিসহ সব ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবরূপ পাবে।
আমরা জানি কয়েক বছর ধরে কৃষি থেকে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততার কারণে ফসল না হওয়ায়। তবে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে উন্নত জাত ও লবণসহিষ্ণু জাত এবং কারগরি পরামর্শে আবারও কৃষির দিকে ঝুঁকছেন চাষি। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে আমি আশা করছি। যেহেতু উপকূলীয় অঞ্চল কৃষিতে ব্যাপক অবদান রাখছে সে কারণে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায় উপকূলকে গুরুত্ব দিতে হবে বেশি। কৃষি ক্ষেত্রে উপকূলকে বেশি গুরুত্ব দিলে এবং এ ধারা অব্যাহত থাকলে যেমন অনাবাদি জমি আবাদি হবে, লবণসহিষ্ণু জাতের কারণে লবণাক্ত জমিতে চাষাবাদ হবে, তেমনি কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হবেন, লাভবান হবে দেশ এবং দেশ শস্য সংকটে পড়বে না। উল্লেখ্য পুরোনো আমলের চাষাবাদ প্রণালি পরিবর্তন করে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত চাষাবাদে মনোযোগী হতে হবে। আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা সম্পর্কে কৃষকদের কৃষি বিশেষজ্ঞ ও কৃষি কর্মকর্তাদের সক্রিয় সহযোগিতা এবং বেশি বেশি প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
পরিশেষে বলতে চাই, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজন চলছে সারা দেশে। কৃষিকে লাভজনক খাতে রূপান্তরের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে স্থায়ী ভিত্তি দিতে হলে, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হোক না একটি আন্দোলন? বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে হোক না কৃষির আন্দোলন? হোক একটি অঙ্গীকার, কৃষিতে বদলাবে বাংলাদেশ, কৃষিতে বদলে যাক উপকূল। এটাই হোক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অঙ্গীকার।
শফিকুল ইসলাম খোকন
সাংবাদিক, কলামিস্ট ও স্থানীয় সরকার বিষয়ে গবেষক
msi.khokonp@gmail.com
0 মন্তব্যসমূহ