Header Ads Widget


স্বাধীনতার পাঁচ দশকে বাংলাদেশ - ড. আতিউর রহমান

 সামাজিক সূচকগুলোতে বাংলাদেশের পাঁচ দশকের সাফল্য এখন সহজেই বোঝা যায়। দারিদ্র্য ও অতিদারিদ্র্য দ্রুত কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিকাশ আরো গতিময় হবে। বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পথেই হাঁটতে হবে।


মাত্র এক দশক আগেও বাংলাদেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ ছিল বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে।

তাই গত ২১ মার্চ বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে শতভাগ বিদ্যুতায়ন উদযাপিত হয়েছে দেখে বিস্মিত হওয়ার কথা। এই মুজিববর্ষ আর স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর আনন্দ উদযাপনের মধ্যেই স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যুক্ত হওয়া, করোনা মহামারির পরও দ্রুত মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার গতিশীল হওয়ার মতো ঘটনা আমাদের সামনেই ঘটেছে। কাজেই শত বাধা আর প্রতিকূলতা পেরিয়ে এগোনোর যে ট্র্যাক রেকর্ড আমাদের রয়েছে, তার বদৌলতেই শতভাগ বিদ্যুতায়ন আমাদের কাছে আর অকল্পনীয় বিষয় নয়।

চিরকাল কৃষিনির্ভর গ্রামবাংলার কথা শুনে এসেছি। আজ দেখছি সরকারের ‘গ্রামেও শহরের মতো সব সুবিধা’ নিশ্চিত করার নীতি-কৌশলের ফলে গ্রামবাংলার মানুষের আয়েরও শতকরা ৬০ ভাগ আসছে অকৃষি খাত থেকে। তাই বলা যায়, স্বাধীনতার পাঁচ দশকে আমরা সত্যি আমূল পাল্টে দিতে পেরেছি এ দেশের মেহনতি মানুষের জীবন চলার চিত্রটি। চ্যালেঞ্জ তো এখনো আছে। তবু যে বিপুল ইতিবাচক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ গেছে, বিশেষত এক যুগের কিছু বেশি সময় ধরে, তার স্বীকৃতি না দিয়ে তো উপায় নেই।

এই অদম্য অগ্রযাত্রা শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু, স্বাধীন দেশে পা রেখেই। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে লাখো মানুষ যখন তাঁকে বরণ করে নিচ্ছিল, তখনই তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন যদি এ দেশের মানুষ খেতে না পায়, যদি কর্মসংস্থান না হয়, তাহলে স্বাধীনতা পূর্ণতা পাবে না। মাত্র চার বছরেরও কম সময়ে বহু বিশেষজ্ঞের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে বঙ্গবন্ধু তাঁর বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের ‘এক্সপ্রেসওয়ে’তে তুলে দিয়েছিলেন। ওই অল্প সময়েই তিনি দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে একটি শক্ত ভিত্তি শুধু দিয়েছিলেন তা-ই নয়, বরং দ্রুতগতির এবং জনগণকেন্দ্রিক উন্নয়নের আগামী দিনের পথনকশা জনগণের সামনে হাজির করে তিনি সবাইকে আশাবাদীও করে তুলেছিলেন।

বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছি। মেগা অবকাঠামো নির্মাণ, কৃষি ও অকৃষি খাতের যুগল উন্নতির ফলে আমাদের প্রবৃদ্ধি, রিজার্ভ আর রপ্তানির পরিমাণ, মাথাপিছু আয়ের মতো সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকে যেমন, তেমনি ক্ষুধাসূচক মানুষের গড় আয়ু, জেন্ডার প্যারিটি ইনডেক্সের মতো সামাজিক সূচকগুলোতেও বাংলাদেশের পাঁচ দশকের সাফল্য এবং বিশেষ করে গত ১২-১৩ বছরের অর্জন এখন সহজেই বোঝা যায়।

১৯৭৫-এর পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি সাত গুণেরও বেশি বেড়েছে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক রূপান্তরের ক্ষেত্রে অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়মেই জিডিপিতে কৃষির অবদান কমেছে। আর সেই স্থান ক্রমান্বয়ে দখল করেছে শিল্প খাত। শিল্প খাতের প্রসার মানেই আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের প্রসার। বাংলাদেশে অপেক্ষাকৃত কম দক্ষ নারী কর্মীর ব্যাপক কর্মসংস্থান রপ্তানিনির্ভর শিল্পায়নকেই শুধু প্রতিযোগী করেছে তা নয়, দারিদ্র্য নিরসন এবং সামাজিক উন্নয়নেও তা নয়া মাত্রা যুক্ত করেছে। ফলস্বরূপ জিডিপিতে শিল্পের অবদান বেড়ে হয়েছে ৩৫ শতাংশ।

জিডিপিতে কৃষির অবদান কমে এলেও কৃষি উৎপাদন কিন্তু বেড়েছে। তার মানে কৃষিতে আধুনিকায়ন ঘটেছে। দেশের গ্রামাঞ্চল একদিকে বর্ধিষ্ণু শিল্প ও সেবা খাতের কাঁচামাল ও মূল্য সংযোজিত পণ্য/সেবা সরবরাহ করছে, অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলে মানুষের আয় বৃদ্ধির ফলে নতুন ভোক্তা হিসেবে তারা অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা বৃদ্ধিতেও রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। মোটকথা গোটা অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্যে একটি বড়মাত্রার স্বনির্ভরতা তৈরি করা সম্ভব হয়েছে কৃষি ও শিল্পের যুগপৎ বিকাশের ফলে।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য দরকার হয়েছে সরকারি ও ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ। সেই বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ধারাবাহিক উন্নয়নে সমর্থ হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত দশকে নাটকীয় অগ্রগতি অর্জনে সমর্থ হয়েছেন।

ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়ম সহজীকরণ এবং বিদ্যুতের সহজলভ্যতার প্রভাবে বিনিয়োগের মাত্রা যে বৃদ্ধি পেয়েছে তার একটি আদর্শ উদাহরণ হতে পারে শিল্পঋণের বিতরণ বৃদ্ধি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সাম্প্রতিককালে ব্যাংকিং খাতের বিতরণ করা ঋণ সত্যি দ্রুত বাড়ছে। কৃষি ও শিল্প খাতের ধারাবাহিক বিকাশ বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি করেছে। আর তা প্রতিফলিত হয়েছে রপ্তানি বৃদ্ধিতে।

এসবের পাশাপাশি গত ১০-১২ বছরে বাংলাদেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির যে নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে, সেটিও বাংলাদেশের অর্থনীতিকে একই সঙ্গে বেগবান করেছে এবং এর ঝুঁকি সহনক্ষমতা বাড়িয়েছে। বিশেষ করে সামাজিক পিরামিডের পাটাতনে থাকা প্রান্তিক ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী নাগরিকদের কাছে আর্থিক সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তির উদ্ভাবনী নীতি উদ্যোগগুলো আশাতীত সুফল দিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক সময়ের প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে বাংলাদেশে ব্যাংক হিসাবধারীদের এক-তৃতীয়াংশই এখন ডিজিটাল লেনদেন করছে। দক্ষিণ এশিয়ার জন্য গড়ে এই অনুপাত মাত্র ২৮ শতাংশ।

বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অর্জন ও সম্ভাবনাগুলোকে বিবেচনায় নিয়েই কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু বাংলাদেশের এমন সাফল্যের তিনটি প্রধানতম কারণ চিহ্নিত করেছেন। প্রথমত, তাঁর মতে, বাংলাদেশ সরকার জাতীয় অগ্রযাত্রায় দেশের অসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে (অর্থাৎ এনজিওগুলোকে) কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছে। ফলে সামাজিক পরিবর্তনে তারা সরকারের পরিপূরক ভূমিকা রাখতে পেরেছে কার্যকরভাবে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিগত এক দশকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির যে নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছে, সেটিও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনে, বিশেষত অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে বলে তিনি মনে করেন। তৃতীয়ত, কৌশিক বসু মনে করেন যে বাংলাদেশের তুলনামূলক তরুণ জনশক্তি এবং সস্তা শ্রমের সহজলভ্যতা দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধির প্রধানতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার সুফল পিছিয়ে থাকা নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে সাফল্য। নীতিনির্ধারকরা এদিকটিতে মনোনিবেশ করেছেন বলেই অতিধনীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির ফলে আয়বৈষম্য কিছুটা বাড়লেও ভোগবৈষম্যকে নিয়ন্ত্রণে রাখা গেছে। আর এর ফলে দারিদ্র্য ও অতিদারিদ্র্য দ্রুত কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে মহামারিজনিত অচলাবস্থার ফলে এই দুটি হার এরই মধ্যে বেড়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে দারিদ্র্য ও অতিদারিদ্র্য হ্রাসে আগের ধারাবাহিকতায় ফেরা সম্ভব হবে বলে মনে করছে নীতিনির্ধারক মহল। তবে পদ্মা সেতু, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ মেগা অবকাঠামো প্রকল্পগুলো সময়মতো বাস্তবায়ন করা গেলে সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিকাশ আরো গতিময় হবে।

বাংলাদেশকে যে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পথেই হাঁটতে হবে, তা আমাদের জাতির পিতা শুরুতেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন। ১৯৭২-এর ৯ মে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কী চাই? আমি চাই বাংলার মানুষ পেট ভরে খাক। আমি কী চাই? আমার বাংলার বেকার কাজ পাক। আমি কী চাই? আমার বাংলার মানুষ সুখী হোক। ’ বঙ্গবন্ধুর মুখ নিঃসৃত এই বাক্যগুলোর মাধ্যমে মুক্তির সংগ্রামে নিয়োজিত জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা যেভাবে প্রস্ফুটিত হয়েছে, তা সম্ভবত আর কোথাও পাওয়া যাবে না।

বঙ্গবন্ধুর অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পথনকশা বুকে ধারণ করে এ দেশবাসী বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে এই চ্যালেঞ্জগুলোও মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নেবে। জয় বাংলা।

লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর



==================================================================


For You, With You, For Ever…. 

সমাহার ডট নেট-এর  পণ্য সামগ্রী ও সেবা পেতে রিসেলার, সেলার সেন্টারে সরাসরি যোগাযোগ করুন।

  • অ্যাপ, সফটওয়্যার, ওয়েবসাইট, ডিজিটাল মার্কেটিং ও ডোমেইন হোস্টিং রেজিস্টেশন করা হয়।
  • নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী, ফ্যাশন, পারফিউম, মেডিসিন, মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ফ্রিজ, টিভি, ক্যামেরা, মোটরবাইক, আসবাবপত্র, এপার্টমেন্ট, বাণিজ্যিক এবং আবাসিক প্রপাটির পাশাপাশি জমি ও প্লট সুলভ মূল্যে বিক্রি করা হয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ ভোক্তাদের জন্য নিবেদিত বিভিন্ন রকমের সার্ভিসগুলো দেয়া হয়।
  • আমাদের রিসেলার হয়ে অবসর সময়ে বিনিয়োগ ছাড়া, দৈনিক শুধু ৩-৪ ঘন্টা সময় দিয়ে নিশ্চিত পেসিভ ইনকাম করুন। ৬/৭ মাস নিয়মিত সময় দিলে অবশ্যই মাসিক ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ইনকামের নিশ্চয়তা রয়েছে।
  • আকর্ষণীয় কমিশনে ডিলার, এজেন্ট ও সেলার সেন্টার দেয়া হচ্ছে…

এছাড়াও আপনি আপনার ব্যবসার জন্য ট্রেডিশনাল মার্কেটিং অথাৎ সরাসরি আপনার ব্যবসার প্রচার করাতে চাইলে। সমাহার ডট নেট এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। যেখান থেকে আপনি আপনার ব্যবসার জন্য খুবই কম খরচে ডিজিটাল মার্কেটিং অথবা ট্রেডিশনাল মার্কেটিং করাতে পারবেন। এছাড়া ও সমস্ত প্রকার ডিজিটাল অথবা ট্রেডিশনাল সুবিধা নিতে পারবেন।

আপনি যদি আপনার ব্যবসাকে কি ভাবে অনলাইনে নিয়ে যাবেন বা ব্যবসাকে বড় করবেন অথাৎ ব্যবসার প্রসার ঘটাবেন তা জানতে চান তবে , সময় নষ্ট না করে এখুনি  রিসেলার, সেলার সেন্টারে সরাসরি যোগাযোগ করুন।  তার জন্য আপনাকে কোনো টাকা খরচ করতে হবে না। সম্পূর্ণ ফ্রীতে আপনি পরামর্শ পাবেন।

⌂ প্রধান কার্যালয়ঃ সিকদার প্লাজা (১ম ও ২য় তলা), লতাপাতা বাজার, কাপাসিয়া, গাজীপুর – ১৭৩০

মোবাইলঃ ০১৭১১১১৩৮৫২ , ই-মেইলঃ support@samahar.net

আশা করি এই পোস্টটি আপনাকে দরকারী কিছু তথ্য দিয়েছি। পরবর্তী পোস্ট পাওয়ার জন্য সাথেই থাকুন…


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ