আধুনিক পাশ্চাত্য বস্তুবাদী সভ্যতার বিকাশ এবং বিশ্বময় এর বিস্তারের সাথে সাথে এমনকি বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর অধিবাসীদের মধ্যেও আল্লাহ ভীতি ও তার করুণার আশা সীমিত সংখ্যক লোকের মধ্যেই দেখা যায়। বাহ্যিকভাবে দৃশ্যমান এই যে, অনেকেই আল্লাহর আনুষ্ঠানিক ইবাদত করেন তবে তা বহুলাংশেই পার্থিব লাভালাভের জন্য; পরকালের মঙ্গলের জন্য কদাচিৎ। এটি কেবল সাধারণ লোকের মধ্যেই প্রচলিত নয়, বরং কথিত ধার্মিকদের অনেকের মধ্যেও বিদ্যমান। এর প্রধান কারণ হলো- মুখে যা-ই বলুন না কেন, তাদের অন্তরে আল্লাহ ভীতি নেই। সুতরাং এরা আল্লাহর করুণা লাভ করতে পারেন না। এরূপ লোকের সংখ্যা অন্য ধর্মাবলম্বীদের মতো মুসলমানদের মধ্যেও ব্যাপক হারে বেড়েছে। এ কারণে বিশ্বময় সব মানুষের তো বটেই এবং মুসলমানদেরও আজ দুর্দিন।
প্রকৃতপক্ষে মানুষের মনে আল্লাহ ভীতি এবং রহমতের আশা সমভাবে থাকা উচিত। আল্লাহর শেষ নবী মুহাম্মদ সা: ও তাঁর সহচরদের মতো পুণ্যাত্মা মহাপুরুষদের মনে ভয় ও আশা সমভাবে উপস্থিত ছিল। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর ফারুক রা: বলতেন- ‘কাল কিয়ামতের মাঠে যদি অদৃশ্য জগৎ থেকে আওয়াজ দেয়া হয় : একজন মানুষ ব্যতীত অপর কেউ বেহেশতে যেতে পারবে না, তখন আমি ধারণা করি এবং প্রবল আশা রাখি যে, সে ব্যক্তি আমিই হবো। আর যদি অদৃশ্য জগতের বাণী এই হয় যে, কেবল একটি মাত্র লোক দোজখে যাবে, তবে আশঙ্কা করছি যে, না জানি সেই লোক আমিই হই’ (ইমাম গাজ্জালি, কিমিয়ায়ে সা’আদত, ১৯৭৭, চতুর্থ জিলদ্, পৃষ্ঠা ১০৮)। অধুনা আমাদের এরূপ আল্লাহ ভীতি বিরল।
জগতে আল্লাহ ভীতি মানবহৃদয়ে আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভের একটি উন্নত অবস্থা। এর মর্যাদা অতি উচ্চ। এর ফল ও উৎপত্তির কারণগুলোও তেমনি উন্নত ও উৎকৃষ্ট বিষয়। ভয় হাসিল হওয়ার মূল কারণ শরিয়াহর জ্ঞান এবং আধ্যাত্মিক দর্শন-জ্ঞান উভয়ই। আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে থাকে’ (সূরা ফাতের : আয়াত ২৮)। রাসূলে করিম সা: বলেছেন : ‘আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করা সব হিকমতের শিরোমণি’। আল্লাহ ভীতি, পরহেজগারি ও নিষ্কলঙ্ক অবস্থা- এই তিনটি গুণ আল্লাহর ভয়ের ফল। এই গুণগুলো যাবতীয় সৌভাগ্য বা ইহকাল পরকালের সৌভাগ্যের ও মঙ্গলের বীজ। কারণ প্রবৃত্তির কামনা ও আকাক্সক্ষাকে সংযত ও দমন না করতে পারলে এবং সেই লক্ষ্যে যাবতীয় কষ্ট সহ্য করতে না পারলে মানুষ পরলোকের পথে অগ্রসর হতে পারে না, তেমনি ইহকালেও মঙ্গল লাভ করতে পারে না। আল্লাহ ভীতির আগুনে পুড়ে মানুষ যেমন প্রবৃত্তি ও কামনাকে ভস্মে পরিণত করতে পারে, তেমন আর কোনোভাবেই পারে না। এ কারণেই আল্লাহ ভীরু মানুষের জন্য আল্লাহ তায়ালা ‘অনুগ্রহ’, ‘জ্ঞান’, ‘পথপ্রাপ্তি’ ও ‘সন্তোষ’- এই চার অমূল্য বস্তু নির্ধারণ করে রেখেছেন। এই শুভ সংবাদ তিনি তিনটি আয়াতে বিবৃত করেছেন : ‘যারা স্বীয় প্রভুকে ভয় করে তাদের জন্য হেদায়েত ও রহমত’ (সূরা আরাফ : আয়াত ৩৫)। ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালাকে তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে কেবল জ্ঞানীরাই না দেখেও ভয় করে থাকে’ (সূরা মুলক : আয়াত ১২)। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তালা বলেন : ‘আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন’ (সূরা বায়্যিনা: আয়াত ৮)। আল্লাহ ভীতি থেকে উৎপন্ন তাকওয়া বা পরহেজগারিই আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির কাছ থেকে গ্রহণ করেন : ‘(কোরবানির জন্তুর রক্ত-গোশত আল্লাহ গ্রহণ করেন না) তিনি তোমাদের নিকট থেকে কেবল পরহেজগারি গ্রহণ করেন’ (সূরা হজ : আয়াত ৩৭)। আল্লাহ বলেন : ‘যারা ঈমান এনেছে এবং ইহুদি হয়েছে আর খ্রিষ্টান ও সাবেঈন- তাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি এবং সৎকাজ করেছে, তাদের পালনকর্তার কাছে তাদের জন্য রয়েছে পুরস্কার। আর তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না’ (সূরা বাকারা : আয়াত ৬২)।
রাসূলে করিম সা: বলেন : ‘কিয়ামতের ময়দানে জগতের সব মানুষকে একত্র করে এমন গুরুগম্ভীর ও উচ্চরবে ঘোষণা করা হবে যে, নিকটবর্তী ও দূরবর্তী সবাই তা সমভাবে শুনতে পাবে। বলা হবে : হে মানবগণ! তোমাদের সৃষ্টিকাল হতে অদ্যাবধি আমি তোমাদের কথা শুনে আসছি। আজ তোমরা আমার কথাগুলো মনোযোগসহকারে কান পেতে শোনো। এখন আমি তোমাদের কৃতকার্যগুলো তোমাদের সামনে উপস্থাপন করব। তোমরা তোমাদের সম্মান ও মর্যাদা কুলীন বংশের ওপর স্থাপন করেছিলে, আমিও তোমাদের মর্যাদা এবং কৌলীন্য কিসে, তা নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম; কিন্তু তোমাদেরই স্থাপিত মর্যাদা ও কৌলীন্যকে তোমরা উন্নত রেখেছ এবং আমার নির্ধারিত সম্মান ও কৌলীন্যকে তুচ্ছজ্ঞানে দমিয়ে রেখেছ, আমি তোমাদের কৌলীন্য ও মর্যাদা সম্পর্কে বলেছিলাম : ‘নিশ্চয় সেই ব্যক্তিই তোমাদের মধ্যে মর্যাদায় ও গৌরবে সর্বশ্রেষ্ঠ, যে তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা অধিক পরহেজগার’ (সূরা হুজুরাত : আয়াত ১৩)। আমার এ ঘোষণার বিরুদ্ধে তোমরা বলেছিলে : ‘অমুকের পুত্র অমুকই বংশমর্যাদায় সর্বাপেক্ষা কুলীন এবং সর্বাধিক সম্মানী। আজ আমি আমার স্থাপিত ও নির্ধারিত কৌলীন্যের শ্রেষ্ঠত্ব এবং তোমাদের নির্ধারিত কৌলীন্যের হীনতা ও অসারতা প্রমাণ করেছি,’ এই বলে তিনি সম্বোধন করবেন, ‘হে আল্লাহ ভীরুগণ! তোমরা কোথায়? তাড়াতাড়ি আসো।’ সাথে সাথে ফেরেশতারা একটি পতাকা উত্তোলন করে অগ্রভাগে চলতে থাকবেন এবং আল্লাহ ভীরু পরহেজগারগণ তাদের পেছনে পেছনে চলতে থাকবেন। এভাবে শোভাযাত্রা করে পরহেজগারগণ বিনা হিসেবে বেহেশতে চলে যাবেন। আল্লাহ ভীরুগণকে দ্বিগুণ সওয়াব দেয়া হয়। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘যে ব্যক্তি তার প্রভুর সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করে, তার জন্য রয়েছে দুই বেহেশত’ (সূরা আর রাহমান : আয়াত ৪৬)। (ইমাম গাজ্জালি, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১০৯-১১০)।
সুতরাং পিতৃপরিচয় ও বংশমর্যাদা কৌলীন্য, যোগ্যতা ও আভিজাত্যের মাপকাঠি নয়। ইহকালে নিজস্ব কর্তব্য পালনে আল্লাহ ভীতি ও পরহেজগারিই কোনো ঈমানদারকে কৌলীন্য ও মর্যাদা এনে দিতে পারে। ইহকালে ন্যায়াচরণ, ন্যায়নিষ্ঠা ও ন্যায়ের ভিত্তিতে জীবনযাপনই একজন লোককে ইহকাল ও পরকালে কৌলীন্য ও মর্যাদার দাবিদার করতে পারে। এখন এর ব্যত্যয় হরহামেশাই দেখা যায়; যে কারণে পৃথিবীর কোনো কোনো দেশে রাজতন্ত্র ও গোত্রতন্ত্রসহ স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং যেসব দেশে গণতন্ত্র চালু আছে সেখানে জোরজবরদস্তিভাবে ক্ষমতায় যাওয়া ও তা আঁকড়ে রাখা ‘রীতি’তে পরিণত হয়েছে। এসবই আল্লাহ তায়ালার বিধানের পরিপন্থী ও নাজায়েজ। এমন শাসনব্যবস্থা যেখানে চালু থাকে সেখানে নানা বালা-মুসিবত ও বিপর্যয় নেমে আসে। তাই আজ পৃথিবীব্যাপী বিপর্যয়ের দাবানল নিরবছিন্নভাবে দাউ দাউ করে জ্বলছে।
কুরআনের আলোকে যদি পৃথিবীর জনগোষ্ঠী এবং তাদের শাসকরা নিজেদের পরিচালিত করতেন তবে তারা আল্লাহ তায়ালার রহমতশূন্য হতেন না। এর প্রতিকারস্বরূপ আল্লাহ তায়ালা মানুষকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করে থাকেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, ধনসম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতির মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের, যারা তাদের ওপর যখন কোনো বিপদ আপতিত হয় তখন বলে : আমরা তো আল্লাহরই জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই কাছে ফিরে যাবো। এরাই তারা যাদের প্রতি রয়েছে তাদের পালনকর্তার তরফ থেকে অশেষ অনুগ্রহ ও করুণা আর এরাই হেদায়াতপ্রাপ্ত।’ (সূরা বাকারা : আয়াত ১৫৫-১৫৭)। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন : ‘নিশ্চয় যারা কুফরি করে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তাদের ওপর আল্লাহ, ফেরেশতা ও সমস্ত মানুষের অভিসম্পাত’ (সূরা বাকারা : আয়াত ১৬১)। এ কারণে রাসূলে করিম সা: বলেন : ‘মহা মহিমান্বিত আল্লাহ তায়ালা বলেনÑ আমি আমার ইজ্জত অর্থাৎ গৌরবের শপথ করে বলছি, আমি কখনো দুই ভয় এবং দুই অভয় কোনো মানুষের মধ্যে একত্রিত করি না। যে বান্দা ইহসংসারে আমার ভয়ে ভীত থাকবে পরকালে আমি তাকে নির্ভয় রাখব। আর যে ব্যক্তি ইহলোকে আমার ব্যাপারে নির্ভয় থাকবে তাকে আমি পরলোকে ভীত ও সন্ত্রস্ত রাখব। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, পৃথিবীর সব জীবজন্তুই তাকে দেখে ভয় করে থাকে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে না, আল্লাহ তায়ালা তাকে জগতের সব পদার্থ দিয়ে ভয় দেখান। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালাকে সর্বাধিক ভয় করে, সে ব্যক্তিই সর্বাপেক্ষা পরিপক্ব বুদ্ধিমান’ (ইমাম গাজ্জালি, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১১০)।
আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘পৃথিবীতে এবং তোমাদের জীবনের ওপরও কোনো বিপদ আসে না; কিন্তু তা লিপিবদ্ধ রয়েছে এক দফতরে আমি তা সংঘটিত করার আগেই। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে খুব সহজ কাজ। এটি এ জন্য যে, তোমরা যা কিছু হারাও তার জন্য যেন দুঃখিত না হও এবং তিনি তোমাদের যা কিছু দিয়েছেন তার জন্য যেন উল্লসিত না হও। আল্লাহ কোনো অহঙ্কারী, গর্বিত-উদ্ধতকে ভালোবাসেন না’ (সূরা হাদিদ : আয়াত ২২-২৩)। তিনি আরো বলেন : ‘কোনো বিপদই আল্লাহর নির্দেশ ব্যতিরেকে আসে না। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে, তিনি তার অন্তরকে সৎপথ প্রদর্শন করেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে পরিজ্ঞাত’ (সূরা আত তাগাবুন : আয়াত ১১)। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন : ‘আর যেসব আপদ-বিপদ তোমাদের ওপর আপতিত হয়, তা তো তোমাদের নিজ হাতে অর্জিত কর্মেরই কারণে এবং তোমাদের অনেক পাপ তিনি ক্ষমা করে দেন’ (সূরা আশ শূরা : আয়াত ৩০)।
বিজ্ঞানীদের মতে, বর্তমান বিশ্বে করোনাভাইরাসের যে প্রাদুর্ভাব ঘটেছে তা প্লেগ, যক্ষ্মা, কলেরা, ম্যালেরিয়া, বসন্ত প্রভৃতির মতো কোনো প্রাকৃতিক বা জীবজন্তুবাহিত রোগ নয়Ñ এটা মানুষের সৃষ্ট রোগ। মোটকথা, এটি একটি মরণব্যাধি যা বিশ্বের ২০৬টি দেশে ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে এ পর্যন্ত ৬৪ হাজারেরও বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছে এবং ১২ লক্ষাধিক লোক আক্রান্ত হয়েছে। তার পরও এ সংখ্যা দিন দিন দ্রুত গতিতে বেড়েই চলেছে। অবশ্য এতে নিরাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। পৃথিবীতে বিপর্যয় নেমে আসার কারণ ওপরে আলোচনা করা হয়েছে। এসব বিপর্যয় থেকে পৃথিবীকে রক্ষার জন্য আল্লাহ তায়ালার নীতি সম্বন্ধে তিনি বলেন : ‘তার পর তারা আল্লাহর হুকুমে জালুতের বাহিনীকে পরাজিত করল। আর আল্লাহ দাউদকে রাজ্য ও হিকমত দান করলেন এবং তাকে শেখালেন, যা তিনি চাইলেন। মানবজাতির কতেককে যদি কতেকের দ্বারা আল্লাহ প্রতিহত না করতেন, তাহলে গোটা পৃথিবী বিপর্যস্ত হয়ে যেত। কিন্তু বিশ্ববাসীর প্রতি আল্লাহ হলেন পরম করুণাময়’ (সূরা বাকারা : আয়াত ২৫১)। এতে আল্লাহ তায়ালা বোঝাতে চাইছেন বিশ্বের দেশে দেশে শাসনভার এরূপ সব ব্যক্তির ওপরে ন্যস্ত থাকা জরুরি যারা আল্লাহ ভীরু ও পরহেজগার। প্রকৃত সত্য এই যে, জ্ঞানী লোকেরাই হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়; আর কেউ নয় এবং তারাই সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমানও বটে। তবে এ কথা সত্য আল্লাহ তায়ালার করুণার বরকতেই বহু বড় বড় বিপর্যয়ের পরও পৃথিবী অধিবাসীশূন্য হয়নি এবং কিয়ামতের আগ পর্যন্ত তা হবেও না। এ ধরনের পরীক্ষা ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই পৃথিবী কিয়ামত পর্যন্ত অগ্রসর হবে।
এখন আল্লাহ প্রদর্শিত পথে চলার এবং এ বিষয়ে সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে। বর্তমানকালে পৃথিবী যে পথে চলছে তা পরিহার করে শরিয়াহর পথে যদি আমরা অগ্রসর হই তাহলে আমরাই লাভবান হবো এবং সে পথে চলার জন্যই আল্লাহ তায়ালা যাবতীয় বিধ্বংসী বিপদ-আপদ দিয়ে আমাদের তাগিদ দিচ্ছেন। পবিত্র কুরআন বিশ্বকোষসদৃশ এবং তাতেই আমাদের চলার পথ নির্দেশ আছে। হ
লেখক : অর্থনীতির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও
ভাইস প্রিন্সিপাল মহিলা সরকারি কলেজ, কুমিল্লা
প্রকৃতপক্ষে মানুষের মনে আল্লাহ ভীতি এবং রহমতের আশা সমভাবে থাকা উচিত। আল্লাহর শেষ নবী মুহাম্মদ সা: ও তাঁর সহচরদের মতো পুণ্যাত্মা মহাপুরুষদের মনে ভয় ও আশা সমভাবে উপস্থিত ছিল। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর ফারুক রা: বলতেন- ‘কাল কিয়ামতের মাঠে যদি অদৃশ্য জগৎ থেকে আওয়াজ দেয়া হয় : একজন মানুষ ব্যতীত অপর কেউ বেহেশতে যেতে পারবে না, তখন আমি ধারণা করি এবং প্রবল আশা রাখি যে, সে ব্যক্তি আমিই হবো। আর যদি অদৃশ্য জগতের বাণী এই হয় যে, কেবল একটি মাত্র লোক দোজখে যাবে, তবে আশঙ্কা করছি যে, না জানি সেই লোক আমিই হই’ (ইমাম গাজ্জালি, কিমিয়ায়ে সা’আদত, ১৯৭৭, চতুর্থ জিলদ্, পৃষ্ঠা ১০৮)। অধুনা আমাদের এরূপ আল্লাহ ভীতি বিরল।
জগতে আল্লাহ ভীতি মানবহৃদয়ে আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভের একটি উন্নত অবস্থা। এর মর্যাদা অতি উচ্চ। এর ফল ও উৎপত্তির কারণগুলোও তেমনি উন্নত ও উৎকৃষ্ট বিষয়। ভয় হাসিল হওয়ার মূল কারণ শরিয়াহর জ্ঞান এবং আধ্যাত্মিক দর্শন-জ্ঞান উভয়ই। আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে থাকে’ (সূরা ফাতের : আয়াত ২৮)। রাসূলে করিম সা: বলেছেন : ‘আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করা সব হিকমতের শিরোমণি’। আল্লাহ ভীতি, পরহেজগারি ও নিষ্কলঙ্ক অবস্থা- এই তিনটি গুণ আল্লাহর ভয়ের ফল। এই গুণগুলো যাবতীয় সৌভাগ্য বা ইহকাল পরকালের সৌভাগ্যের ও মঙ্গলের বীজ। কারণ প্রবৃত্তির কামনা ও আকাক্সক্ষাকে সংযত ও দমন না করতে পারলে এবং সেই লক্ষ্যে যাবতীয় কষ্ট সহ্য করতে না পারলে মানুষ পরলোকের পথে অগ্রসর হতে পারে না, তেমনি ইহকালেও মঙ্গল লাভ করতে পারে না। আল্লাহ ভীতির আগুনে পুড়ে মানুষ যেমন প্রবৃত্তি ও কামনাকে ভস্মে পরিণত করতে পারে, তেমন আর কোনোভাবেই পারে না। এ কারণেই আল্লাহ ভীরু মানুষের জন্য আল্লাহ তায়ালা ‘অনুগ্রহ’, ‘জ্ঞান’, ‘পথপ্রাপ্তি’ ও ‘সন্তোষ’- এই চার অমূল্য বস্তু নির্ধারণ করে রেখেছেন। এই শুভ সংবাদ তিনি তিনটি আয়াতে বিবৃত করেছেন : ‘যারা স্বীয় প্রভুকে ভয় করে তাদের জন্য হেদায়েত ও রহমত’ (সূরা আরাফ : আয়াত ৩৫)। ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালাকে তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে কেবল জ্ঞানীরাই না দেখেও ভয় করে থাকে’ (সূরা মুলক : আয়াত ১২)। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তালা বলেন : ‘আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন’ (সূরা বায়্যিনা: আয়াত ৮)। আল্লাহ ভীতি থেকে উৎপন্ন তাকওয়া বা পরহেজগারিই আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির কাছ থেকে গ্রহণ করেন : ‘(কোরবানির জন্তুর রক্ত-গোশত আল্লাহ গ্রহণ করেন না) তিনি তোমাদের নিকট থেকে কেবল পরহেজগারি গ্রহণ করেন’ (সূরা হজ : আয়াত ৩৭)। আল্লাহ বলেন : ‘যারা ঈমান এনেছে এবং ইহুদি হয়েছে আর খ্রিষ্টান ও সাবেঈন- তাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি এবং সৎকাজ করেছে, তাদের পালনকর্তার কাছে তাদের জন্য রয়েছে পুরস্কার। আর তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না’ (সূরা বাকারা : আয়াত ৬২)।
রাসূলে করিম সা: বলেন : ‘কিয়ামতের ময়দানে জগতের সব মানুষকে একত্র করে এমন গুরুগম্ভীর ও উচ্চরবে ঘোষণা করা হবে যে, নিকটবর্তী ও দূরবর্তী সবাই তা সমভাবে শুনতে পাবে। বলা হবে : হে মানবগণ! তোমাদের সৃষ্টিকাল হতে অদ্যাবধি আমি তোমাদের কথা শুনে আসছি। আজ তোমরা আমার কথাগুলো মনোযোগসহকারে কান পেতে শোনো। এখন আমি তোমাদের কৃতকার্যগুলো তোমাদের সামনে উপস্থাপন করব। তোমরা তোমাদের সম্মান ও মর্যাদা কুলীন বংশের ওপর স্থাপন করেছিলে, আমিও তোমাদের মর্যাদা এবং কৌলীন্য কিসে, তা নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম; কিন্তু তোমাদেরই স্থাপিত মর্যাদা ও কৌলীন্যকে তোমরা উন্নত রেখেছ এবং আমার নির্ধারিত সম্মান ও কৌলীন্যকে তুচ্ছজ্ঞানে দমিয়ে রেখেছ, আমি তোমাদের কৌলীন্য ও মর্যাদা সম্পর্কে বলেছিলাম : ‘নিশ্চয় সেই ব্যক্তিই তোমাদের মধ্যে মর্যাদায় ও গৌরবে সর্বশ্রেষ্ঠ, যে তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা অধিক পরহেজগার’ (সূরা হুজুরাত : আয়াত ১৩)। আমার এ ঘোষণার বিরুদ্ধে তোমরা বলেছিলে : ‘অমুকের পুত্র অমুকই বংশমর্যাদায় সর্বাপেক্ষা কুলীন এবং সর্বাধিক সম্মানী। আজ আমি আমার স্থাপিত ও নির্ধারিত কৌলীন্যের শ্রেষ্ঠত্ব এবং তোমাদের নির্ধারিত কৌলীন্যের হীনতা ও অসারতা প্রমাণ করেছি,’ এই বলে তিনি সম্বোধন করবেন, ‘হে আল্লাহ ভীরুগণ! তোমরা কোথায়? তাড়াতাড়ি আসো।’ সাথে সাথে ফেরেশতারা একটি পতাকা উত্তোলন করে অগ্রভাগে চলতে থাকবেন এবং আল্লাহ ভীরু পরহেজগারগণ তাদের পেছনে পেছনে চলতে থাকবেন। এভাবে শোভাযাত্রা করে পরহেজগারগণ বিনা হিসেবে বেহেশতে চলে যাবেন। আল্লাহ ভীরুগণকে দ্বিগুণ সওয়াব দেয়া হয়। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘যে ব্যক্তি তার প্রভুর সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করে, তার জন্য রয়েছে দুই বেহেশত’ (সূরা আর রাহমান : আয়াত ৪৬)। (ইমাম গাজ্জালি, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১০৯-১১০)।
সুতরাং পিতৃপরিচয় ও বংশমর্যাদা কৌলীন্য, যোগ্যতা ও আভিজাত্যের মাপকাঠি নয়। ইহকালে নিজস্ব কর্তব্য পালনে আল্লাহ ভীতি ও পরহেজগারিই কোনো ঈমানদারকে কৌলীন্য ও মর্যাদা এনে দিতে পারে। ইহকালে ন্যায়াচরণ, ন্যায়নিষ্ঠা ও ন্যায়ের ভিত্তিতে জীবনযাপনই একজন লোককে ইহকাল ও পরকালে কৌলীন্য ও মর্যাদার দাবিদার করতে পারে। এখন এর ব্যত্যয় হরহামেশাই দেখা যায়; যে কারণে পৃথিবীর কোনো কোনো দেশে রাজতন্ত্র ও গোত্রতন্ত্রসহ স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং যেসব দেশে গণতন্ত্র চালু আছে সেখানে জোরজবরদস্তিভাবে ক্ষমতায় যাওয়া ও তা আঁকড়ে রাখা ‘রীতি’তে পরিণত হয়েছে। এসবই আল্লাহ তায়ালার বিধানের পরিপন্থী ও নাজায়েজ। এমন শাসনব্যবস্থা যেখানে চালু থাকে সেখানে নানা বালা-মুসিবত ও বিপর্যয় নেমে আসে। তাই আজ পৃথিবীব্যাপী বিপর্যয়ের দাবানল নিরবছিন্নভাবে দাউ দাউ করে জ্বলছে।
কুরআনের আলোকে যদি পৃথিবীর জনগোষ্ঠী এবং তাদের শাসকরা নিজেদের পরিচালিত করতেন তবে তারা আল্লাহ তায়ালার রহমতশূন্য হতেন না। এর প্রতিকারস্বরূপ আল্লাহ তায়ালা মানুষকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করে থাকেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, ধনসম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতির মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের, যারা তাদের ওপর যখন কোনো বিপদ আপতিত হয় তখন বলে : আমরা তো আল্লাহরই জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই কাছে ফিরে যাবো। এরাই তারা যাদের প্রতি রয়েছে তাদের পালনকর্তার তরফ থেকে অশেষ অনুগ্রহ ও করুণা আর এরাই হেদায়াতপ্রাপ্ত।’ (সূরা বাকারা : আয়াত ১৫৫-১৫৭)। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন : ‘নিশ্চয় যারা কুফরি করে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তাদের ওপর আল্লাহ, ফেরেশতা ও সমস্ত মানুষের অভিসম্পাত’ (সূরা বাকারা : আয়াত ১৬১)। এ কারণে রাসূলে করিম সা: বলেন : ‘মহা মহিমান্বিত আল্লাহ তায়ালা বলেনÑ আমি আমার ইজ্জত অর্থাৎ গৌরবের শপথ করে বলছি, আমি কখনো দুই ভয় এবং দুই অভয় কোনো মানুষের মধ্যে একত্রিত করি না। যে বান্দা ইহসংসারে আমার ভয়ে ভীত থাকবে পরকালে আমি তাকে নির্ভয় রাখব। আর যে ব্যক্তি ইহলোকে আমার ব্যাপারে নির্ভয় থাকবে তাকে আমি পরলোকে ভীত ও সন্ত্রস্ত রাখব। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, পৃথিবীর সব জীবজন্তুই তাকে দেখে ভয় করে থাকে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে না, আল্লাহ তায়ালা তাকে জগতের সব পদার্থ দিয়ে ভয় দেখান। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালাকে সর্বাধিক ভয় করে, সে ব্যক্তিই সর্বাপেক্ষা পরিপক্ব বুদ্ধিমান’ (ইমাম গাজ্জালি, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১১০)।
আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘পৃথিবীতে এবং তোমাদের জীবনের ওপরও কোনো বিপদ আসে না; কিন্তু তা লিপিবদ্ধ রয়েছে এক দফতরে আমি তা সংঘটিত করার আগেই। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে খুব সহজ কাজ। এটি এ জন্য যে, তোমরা যা কিছু হারাও তার জন্য যেন দুঃখিত না হও এবং তিনি তোমাদের যা কিছু দিয়েছেন তার জন্য যেন উল্লসিত না হও। আল্লাহ কোনো অহঙ্কারী, গর্বিত-উদ্ধতকে ভালোবাসেন না’ (সূরা হাদিদ : আয়াত ২২-২৩)। তিনি আরো বলেন : ‘কোনো বিপদই আল্লাহর নির্দেশ ব্যতিরেকে আসে না। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে, তিনি তার অন্তরকে সৎপথ প্রদর্শন করেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে পরিজ্ঞাত’ (সূরা আত তাগাবুন : আয়াত ১১)। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন : ‘আর যেসব আপদ-বিপদ তোমাদের ওপর আপতিত হয়, তা তো তোমাদের নিজ হাতে অর্জিত কর্মেরই কারণে এবং তোমাদের অনেক পাপ তিনি ক্ষমা করে দেন’ (সূরা আশ শূরা : আয়াত ৩০)।
বিজ্ঞানীদের মতে, বর্তমান বিশ্বে করোনাভাইরাসের যে প্রাদুর্ভাব ঘটেছে তা প্লেগ, যক্ষ্মা, কলেরা, ম্যালেরিয়া, বসন্ত প্রভৃতির মতো কোনো প্রাকৃতিক বা জীবজন্তুবাহিত রোগ নয়Ñ এটা মানুষের সৃষ্ট রোগ। মোটকথা, এটি একটি মরণব্যাধি যা বিশ্বের ২০৬টি দেশে ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে এ পর্যন্ত ৬৪ হাজারেরও বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছে এবং ১২ লক্ষাধিক লোক আক্রান্ত হয়েছে। তার পরও এ সংখ্যা দিন দিন দ্রুত গতিতে বেড়েই চলেছে। অবশ্য এতে নিরাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। পৃথিবীতে বিপর্যয় নেমে আসার কারণ ওপরে আলোচনা করা হয়েছে। এসব বিপর্যয় থেকে পৃথিবীকে রক্ষার জন্য আল্লাহ তায়ালার নীতি সম্বন্ধে তিনি বলেন : ‘তার পর তারা আল্লাহর হুকুমে জালুতের বাহিনীকে পরাজিত করল। আর আল্লাহ দাউদকে রাজ্য ও হিকমত দান করলেন এবং তাকে শেখালেন, যা তিনি চাইলেন। মানবজাতির কতেককে যদি কতেকের দ্বারা আল্লাহ প্রতিহত না করতেন, তাহলে গোটা পৃথিবী বিপর্যস্ত হয়ে যেত। কিন্তু বিশ্ববাসীর প্রতি আল্লাহ হলেন পরম করুণাময়’ (সূরা বাকারা : আয়াত ২৫১)। এতে আল্লাহ তায়ালা বোঝাতে চাইছেন বিশ্বের দেশে দেশে শাসনভার এরূপ সব ব্যক্তির ওপরে ন্যস্ত থাকা জরুরি যারা আল্লাহ ভীরু ও পরহেজগার। প্রকৃত সত্য এই যে, জ্ঞানী লোকেরাই হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়; আর কেউ নয় এবং তারাই সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমানও বটে। তবে এ কথা সত্য আল্লাহ তায়ালার করুণার বরকতেই বহু বড় বড় বিপর্যয়ের পরও পৃথিবী অধিবাসীশূন্য হয়নি এবং কিয়ামতের আগ পর্যন্ত তা হবেও না। এ ধরনের পরীক্ষা ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই পৃথিবী কিয়ামত পর্যন্ত অগ্রসর হবে।
এখন আল্লাহ প্রদর্শিত পথে চলার এবং এ বিষয়ে সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে। বর্তমানকালে পৃথিবী যে পথে চলছে তা পরিহার করে শরিয়াহর পথে যদি আমরা অগ্রসর হই তাহলে আমরাই লাভবান হবো এবং সে পথে চলার জন্যই আল্লাহ তায়ালা যাবতীয় বিধ্বংসী বিপদ-আপদ দিয়ে আমাদের তাগিদ দিচ্ছেন। পবিত্র কুরআন বিশ্বকোষসদৃশ এবং তাতেই আমাদের চলার পথ নির্দেশ আছে। হ
লেখক : অর্থনীতির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও
ভাইস প্রিন্সিপাল মহিলা সরকারি কলেজ, কুমিল্লা


0 মন্তব্যসমূহ