Header Ads Widget


ব্র্যান্ডিংয়ের কিছু অজ্ঞাত ক্ষমতা / ব্র্যান্ডিং / সেলফ ব্র্যান্ডিং

আমরা যখন কোনো পণ্য বা সার্ভিস ক্রয় করি তখন আমরা সেটা কেন ক্রয় করি? আমরা প্রতিদিন এই পৃথিবীতে আমাদের নেওয়া প্রত্যেকটা সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই কোনো পণ্য বা সার্ভিস ক্রয় করে থাকি।
আমরা ধারণা করি যে, আমরা যা ক্রয় করি বা যেসব সার্ভিস আমরা গ্রহণ করি সেগুলো ক্রয় করার পেছনে শুধুমাত্র আমাদের সিদ্ধান্তই কাজ করে। কিন্তু নিউরোসায়েন্স, বিহেভিয়েরাল ইকোনমিক্স ও সাইকোলজিক্যাল কিছু রিসার্চে জানা যায় যে, আমরা নিজেদের যতটা না যুক্তিসংগত বলে মনে করি আসলে আমরা ততটা বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন নই।
বরঞ্চ আমরা আমাদের ব্রেইনের কিছু ক্ষুদ্র ও অজ্ঞাত প্রভাব দ্বারা পরিবর্তিত হই। যেসবের কারণে আমরা প্রায়শই আমাদের অজান্তেই আমরা এমন কিছু অযৌক্তিক ও অসঙ্গত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি।
ব্যবসার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা ও মার্কেটারদের মূলত তাদের ক্রেতাদের সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জ্ঞানার্জন করতে হয়। সেক্ষেত্রে তাদেরকে ক্রেতার মাইন্ডসেট সম্পর্কে জানতে হয়। ক্রেতা যেভাবে চায় সেভাবেই তাদের ব্র্যান্ডকে উপস্থাপন করতে হয়।
ক্রেতার মাইন্ডসেট পরিবর্তন করার চেয়ে ক্রেতা সম্পর্কে জানাটাই বেশি জরুরি। চলুন দেখে নেওয়া যাক, এমন কিছু ব্র্যান্ডিং সম্পর্কিত ক্ষমতা সম্পর্কে।

আপনি যা-ই করছেন, সবকিছুই ব্র্যান্ডিং

একটা ব্র্যান্ডের লোগো তৈরির ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডিংটা সর্বপ্রথম কাজ করে। কারণ, একটা পণ্য কেনার পর কিংবা সেটা নিয়ে কথা বলতে চাইলে সেই পণ্যের লোগো বা নামের দরকার পড়বে সবার প্রথমে। আর সেজন্য আপনাকে শুরুতেই বুঝতে হবে যে, একটা পণ্যের লোগো কিংবা তার নামটা যেনো ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম ফল প্রদান করে।
মনে রাখবেন যে, একটা ব্র্যান্ড মূলত আমাদের ব্রেইনের কিছু জ্ঞাত ও অজ্ঞান চিন্তাধারা ছাড়া আর কিছুই নয়। অর্থাৎ, একটি পণ্যের পরিজ্ঞাত ব্র্যান্ডিং হতে পারে সেটার লোগো, সেটার নাম, সেটার ফিচার, সেটার বৈশিষ্ট্য, সেটার দাম, সেটার সার্ভিস, সেটার অ্যাডস কিংবা সেটার মার্কেটিং।
একইভাবে একটা পণ্যের সংজ্ঞাহীন ব্র্যান্ডিং হতে পারে সেটার সাথে জড়িত থাকা ক্রেতা বা বিক্রেতার অনুভূতি। এই অনুভূতিগুলো ধীরে ধীরে জড়ো হতে শুরু করে, গাঢ় হতে শুরু করে।
ক্রেতারা যত বেশি আপনার পণ্যের সাথে ইন্টারেক্ট করবে, যত বেশি তারা আপনার পণ্য সম্পর্কে জানবে, যত বেশি তারা আপনার সাথে আপনার পণ্য নিয়ে কথা বলবে, যেখানে তারা আপনার পণ্যটাকে দেখতে পাবে, যারা আপনার পণ্যটাকে দেখতে পাবে, সেই পণ্যের ব্যবহৃত রঙ যতবার তারা দেখবে ততবেশি তাদের মাঝে সেই পণ্যের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
এর মানে হচ্ছে আপনার পণ্যের সাথে ঘটা প্রত্যেক মুহূর্তই আপনার পণ্যকে প্রমোট করছে। আর এটাই ব্র্যান্ডিংয়ের অজানা এক ক্ষমতা।

আপনার ব্র্যান্ডকে একটা কল্পনার জগতে নিয়ে যান

ধরুন আপনার বিক্রি করা পণ্যটি হচ্ছে, পেপসি। এখন আপনার পণ্যটিকে যদি আপনি ক্রেতাদের মনের মধ্যে জায়গা করে দিতে চান তাহলে আপনাকে এর সম্পর্কে আরো বেশি আলোচনা করতে হবে।
এর সম্পর্কে আরো বেশি ক্রেতাদের কাছে জানান দিতে হবে। এর দোষগুণ, কখন পান করা যায়, কখন এটাকে মানুষ ব্যবহার করে, কীভাবে ব্যবহার করে, কেনো ব্যবহার করে, কারা ব্যবহার করে, কতভাবে ব্যবহার করা যায় ইত্যাদি সম্পর্কে আপনার ক্রেতাদের যতবেশি জানাবেন তত বেশি আপনার পণ্যটি তাদের কাছে মুখরোচক বলে মনে হবে।
আপনার পণ্যের মার্কেটিং টেকনিকের মাধ্যমেই এই ব্র্যান্ডিং পদ্ধতিটাকে আরো বেশি পোক্ত করা সম্ভব হবে। যত বেশি আপনার ব্র্যান্ডের মার্কেটিং হবে, তত বেশি মানুষের কাছে আপনার পন্য সম্পর্কে ধারণা জন্মাবে। যত বেশি মানুষ আপনার পণ্য নিয়ে ভাববে তত বেশি মানুষ আপনার ক্রেতা হতে চাইবে।

মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে ‘কীভাবে’ শব্দের ব্যবহার বাড়িয়ে দিন

প্রত্যেক ব্যবসায়ীই তাদের পণ্যের মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে বেশ ভালো কিছু মার্কেটার নিয়োগ দিয়ে থাকেন। যদিও সেসবের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা কীভাবে সেটা ফলপ্রসূ করছে।
প্রত্যেক ক্রেতার কাছেই আপনার পণ্য নিয়ে গেলে, তারা আপনার জিজ্ঞেস করবে যে, “এটা আমি কেন ব্যবহার করবো?” তখন আপনার উত্তরের উপরেই নির্ভর করবে আপনি সেই পণ্যটি বিক্রি করতে পারবেন কিনা।
কারণ, একবার যদি কোনো ক্রেতা একটা পণ্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে সেই ক্রেতাকে সেই পণ্যের দিকে নিয়ে আসা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। আর সেজন্যেই আপনাকে উত্তর দেয়ার সময়, ‘কী’ উত্তর দেবেন সেটার দিকে খেয়াল না দিয়ে ‘কীভাবে’ উত্তর দেবেন সেটার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
আমরা প্রায়ই টেলিভিশনে অ্যাডভার্টাইজমেন্ট দেখে থাকি। সেখানে আমরা প্রায়ই দেখতে পাই যে, বেশ কিছু অ্যাডভার্টাইজমেন্টের ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো এমনভাবে অ্যাড প্রদান করছে যেখান থেকে আমাদের চোখ সরানো বেশ কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। আর এটাকে বলে মেটাকমিউনিকেশন।
একটা উদাহরণ দিচ্ছি। ধরুন, আপনার পণ্যটি অর্থাৎ পেপসি বিক্রি করতে চাইলে ক্রেতারা জানতে চাইবে যে, এটা তারা কেনো পান করবে! তখন আপনি যদি তাদেরকে সরাসরি বলে দেন যে, এটা বেশ রিফ্রেশিং পানীয় এবং যেকোনো ধরণের অবস্থাতেই এটা আপনার তৃষ্ণা মেটাবে; তাহলে এই পণ্য বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে কমে যাবে।
আপনি যদি ক্রেতাদের সেটা পান করিয়ে দেখান কিংবা আরো একটু সৃজনশীল উপায়ে ক্রেতাকে সেটা বোঝাতে পারেন, তাহলে সেই পণ্য বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

ব্র্যান্ডিংয়ের দ্বারা আপনি ‘সুপারপাওয়ার’ও পেয়ে যেতে পারেন

ব্র্যান্ডিংয়ের আরেকটি অসাধারণ ক্ষমতা হচ্ছে এর বহুবিধ ব্যবহার। ধরুন, আপনি একটি পণ্যের ব্র্যান্ডিং করলেন। সেটা বেশ ভালো অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। এখন এমতাবস্থায় আপনি সেই একই ব্র্যান্ডিংয়ের দ্বারা একই কোম্পানি থেকে যেকোনো ধরণের পণ্য নিয়ে আসলে সেই পণ্যগুলো বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
সেক্ষেত্রে আপনাকে নতুন করে মার্কেটিংয়ের পেছনে ততটা কষ্ট করতে হয় না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বেশিরভাগ কোম্পানিই এই ব্র্যান্ডিং ক্ষমতাটাকে কাজে লাগিয়ে লক্ষকোটি মুদ্রা কামাচ্ছে।
বলা হয়ে থাকে, বর্তমান যুগে অতিমানবীয় ক্ষমতা হচ্ছে অর্থ, প্রযুক্তি আর খ্যাতি। যেকোনো একটি পণ্যের ভালো বিক্রি মানে সেই পণ্যের পাশাপাশি সেই কোম্পানির যেকোনো পণ্যের ভালো বিক্রি। যার মানে দাঁড়াচ্ছে সেই কোম্পানির খ্যাতি। আর বেশিরভাগ মানুষই খ্যাতির পেছনে সারাজীবন দৌঁড়াতে থাকে। আর ব্র্যান্ডিং আপনাকে দিচ্ছে সেই অতিমানবীয় ক্ষমতা।

সূত্র: ইন্টারনেট..

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ