![]() |
সমাজের পরিবর্তন আনার লক্ষ্য নিয়েই কতিপয় উদ্যমী যুবসমাজ সামাজিক বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলো প্রতিষ্ঠিত করে। অতীত থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত সামাজিক বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলো মূলত দাতাদের অনুদানের উপর বা সদস্যদের চাঁদার উপর নির্ভরশীল।
অন্যের দান অসহায় মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে সামাজিক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করে যাচ্ছে এই সব সাংগঠনিক সংগঠন গুলো। চাঁদা বা অনুদানের উপর নির্ভরশীলতা আজকের সৃষ্টি নয় আমাদের দেশে যত বড় বড় সংগঠন বা ফাউন্ডেশন আছে তা দাতাদের অনুদানের উপর নির্ভর করেই আজকের অবস্থানে এসেছে।
কিন্তু আমরা বিংশ শতাব্দীতে এসেও কেন অনুদানের উপর নির্ভরশীল থাকব? আমরা কেন সংগঠন গুলোকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার ব্যাপারে সচেষ্ট হচ্ছি না? আমি নিজে আত্মনির্ভরশীল না হলে অন্যকে কেমন করে আত্মনির্ভরশীল করব?
দাতাদের অনুদানের উপর নির্ভরশীল সংগঠন গুলোর মাঝে কিছু সংগঠন অনেক সময় দাতাদের অনুদান নয় ছয় করে ফেলে। এটা মুলত হয় নিজেরা আত্মনির্ভরশীল না হবার জন্য এবং সংগঠন গুলোকে স্বয়ংসম্পূর্ণ বা আত্মনির্ভরশীল না করার মন-মানসিকতা থেকে।
আমরা বর্তমান বিংশ শতাব্দীতে এসেও যদি সংগঠন পরিচালনার জন্য অনুদান কেই মূখ্য হিসাবে গন্য করি তবে এমন নয় ছয় হবেই। আর যদি নিজেরা আত্মনির্ভরশীল হবার পাশাপাশি সংগঠনের মেম্বারদের আত্মনির্ভরশীল হবার পথ সুগম করে সংগঠন গুলোকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার উদ্যোগ নেয়া হয় তবে অনুদানের উপরে যেমন নির্ভরশীলতা কমবে তেমন মানবতাকে করা যাবে দালাল মুক্ত।
এর ফলাফলও সুদুরপ্রসারি, এছাড়াও সংগঠন স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে যা যা হবেঃ
১. সদস্যগন আত্মনির্ভরশীল হতে পারবে।
২. সংগঠন গুলো আর বেশি অসহায় মানুষকে আত্মনির্ভরশীল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারবে।
৩. দেশ থেকে বেকারত্ব কমবে।
৪. দেশ থেকে দারিদ্র্য কমবে।
৫. উদ্যোক্ত বের হয়ে আসার চর্চা ক্ষেত্র পাবে।
৬. দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে।
৭. এবং ইনশাআল্লাহ উন্নত সোনার বাংলাদেশ গড়তে এই সব স্বয়ংসম্পূর্ণ সংগঠন সমূহ এবং এর আত্মনির্ভরশীল সদস্যগন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে।
সংগঠন গুলোকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে যেমন ধরনের ব্যবসায় হবে তা নিয়ে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস একটি ধারনাটি প্রবর্তন করেন।
“সামাজিক ব্যবসায়” একশ্রেণীর অর্থনৈতিক প্রকল্প যার মূল লক্ষ্য মুনাফার পরিবর্তে মানবকল্যাণ। যে কোন সাধারণ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মতোই এই সকল প্রকল্প পরিচালিত হয়; কেবল লক্ষ্য থাকে মানুষের কল্যাণ – বিশেষ করে দারিদ্র দূর করা। মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৭০ দশক থেকে শুরু করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ব্যাংকিং, টেলিকম, সৌরশক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি, টেক্সটাইল, তাঁত, বিপণন প্রভৃতি খাতে অনেকগুলো কোম্পানী স্থাপন করেছেন যেগুলোর মৌলিক উদ্দেশ্য মুনাফা ম্যাক্সিমাইজ করা নয় ; অন্যদিকে এগুলোর কোনটিই ব্যক্তিগত মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত হয় নি। এই উদ্যোগগুলো কার্যত সামাজিক সমস্যা সমাধানের জন্য স্থাপিত ব্যবসায়িক প্রকল্প। এ ধরণের ব্যবসায়িক পুজিঁ লগ্নির কথা অর্থশাস্ত্রে নেই। এই পরিপ্রেক্ষিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের শেষভাগে “সামাজিক ব্যবসায়” ধারনাটি প্রবর্তন করেন। সামাজিক ব্যবসার সঙ্গে সনাতন ব্যবসার পার্থক্য কেবল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের মধ্যে: সনতান ব্যবসায় মুনাফামুখী এবং সামাজিক ব্যবসায় কোম্পানি মুনাফা করবে নিশ্চয়ই, কিন্তু মালিক মুনাফা নেবে না, মালিক কেবল মূলধন ফেরত নিতে পারবে।
পরিশেষে এ কথাই বলতে চাই, মুহাম্মদ ইউনূস “সামাজিক ব্যবসায়” যে ধারনাটি প্রবর্তন করেন, তা প্রতিটি সামাজিক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন/ফাউন্ডেশন অনুসরণ করলে অন্যের অনুদানের উপর নির্ভরশীলতা পরিহার করে নিজেদের আত্মনির্ভরশীল করতে পারবেন। অসহায়কে আত্মনির্ভরশীল করতে পারবেন।ইনশাআল্লাহ, দেশ হবে সোনার বাংলাদেশ, উন্নত হবে আমাদের বাংলাদেশ
এবং সেই পরিবর্তটা আপনাদের হাত ধরেই।


0 মন্তব্যসমূহ